সৌভিক মজুমদার, প্রকাশ সিনহা, সৌরভ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, কলকাতা : লিপস অ্য়ান্ড বাউন্ডসের অফিসে, ED-র তদন্তকারী অফিসার যে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেছিলেন, শনিবার তা দেখতে চাইলেন হাইকোর্টের ( Calcutta High Court ) বিচারপতি। বললেন, সেগুলি দেখলেই, সমস্য়ার সমাধান হয়ে যাবে। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে ( Abhishek Banerjee ) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ইডি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য় তলব করলেও, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায় যাননি। এই প্রেক্ষাপটে ইডি-র ECIR এবং সমন খারিজের জন্য় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ।
শুক্রবার, আদালতে তাঁর আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, মামলা এখনও বিচারাধীন। শুনানি শেষ হয়ে গেলেও, রায়দান হয়নি। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। তাই, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দাখিল করা নতুন আবেদনের শুনানির অধিকার আদালতের আছে। অভিষেকের আইনজীবীর উদ্দেশে, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ECIR খারিজের আবেদন নিয়ে আপনারা আদালতে এসেছিলেন। এখন নতুন করে এই আবেদনের কারণ কি ?
উত্তরে অভিষেকের আইনজীবী বলেন, বিচারাধীন মামলায় ED-র এই আচরণ বিদ্বেষপূর্ণ। নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া কোনও মামলায় নতুন করে বিচার চেয়ে আমি আদালতে আসিনি। মামলা এখনও সক্রিয় আছে। তাই আদালত আমার আবেদন বিবেচনা করে দেখতেই পারে। পাল্টা ED-র আইনজীবী বলেন, শুনানি শেষ হয়ে রায়দান স্থগিত রাখার সময়, নতুন করে কোনও আবেদন দাখিল করা যায় না। আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য এই আবেদনপত্র দাখিল করা হয়েছে। বিচারাধীন মামলার আবেদনের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। ED-র কোনও এক আধিকারিক যদি লিপস এন্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারে তাঁর মেয়ের ভর্তি সংক্রান্ত কোনও তথ্য দেখে থাকেন, তার সঙ্গে এই মামলার কী সম্পর্ক? এরপর, বিচারপতি জানতে চান, লিপস এন্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারে ফাইল ডাউনলোডের বিষয়টি আদালতের নজরে কে আনল?
ইডির উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ওই ১৬ টি ফাইলে কী আছে? আপনারা দেখেছেন? ইডির আইনজীবী জানান, তদন্তকারী আধিকারিকের মেয়ের ফোন এসেছিল হস্টেলের জন্য। সেই কারণে তিনি কম্পিউটার ব্যবহার করেছিলেন।
সম্ভবত সেখানকার আধিকারিকদের অনুমতি নিয়ে করেছিলেন। যাদবপুরের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ওই অফিসার উদ্বিগ্ন ছিলেন। একজন উদ্বিগ্ন বাবাকে সাহায্য করাই শ্রেয় ছিল। ওই কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। পাল্টা অভিষেকের আইনজীবী বলেন, ED কি ওখানে পিকনিক করতে গেছিল? নাকি ওটা ওঁর বন্ধুর বাড়ি? কোন্ আধিকারিকের অনুমতি নিয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করেছিলেন?
এরপরই, ওই ১৬টি ফাইল দেখতে চেয়ে বিচারপতি বলেন, শনিবার, রাজ্য়ের আইনজীবীকে ডেকে পুলিশের কাছ থেকে ফাইল দেখব। তাহলেই সমস্য়ার সমাধান হয়ে যাবে। শনিবার দুপুর ৩টেয় মামলার পরবর্তী শুনানি।
তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের, 'একটি সিরিয়াস তদন্তে গিয়ে এটা কেন হবে? মেয়ের হোস্টেল খোঁজ করার জন্য ছেলেদের হোস্টেল নিয়ে খোঁজ করা হচ্ছে? এটা কিরকম। এটা নিয়ে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত'
বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্য়ায় বলেন, 'ফাঁসির মঞ্চে যাবেন বলছেন, আবার কোর্টেও যাচ্ছেন! বাঁচতে যাচ্ছেন?'
এদিকে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কর্মী চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বৃহস্পতিবার, বেলা ১২ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সূত্রের দাবি, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া হাজার পাতার নথি সামনে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ED সূত্রে দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময় চন্দন জানান, তিনি একজন সাধারণ কর্মী হিসাবে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে কাজ করেন। যা বলা হত সেই কাজই করতেন। এদিকে, ED সূত্রে দাবি, ফাইল ডাউনলোডের ঘটনায় চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ ED-র দিল্লি অফিসের শীর্ষ কর্তারা। এই নিয়ে দিল্লির অফিস থেকে কলকাতা অফিসের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। সূত্রের দাবি, কেন তল্লাশি অভিযানে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করেছেন? ED-র অফিসার নির্মলকুমার মুসার কাছে এনিয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দিল্লির অফিসে উত্তর দেওয়া হবে।
সূত্রের দাবি, ED-র এই অফিসারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।