কলকাতা: নবান্ন অভিযান ঘিরে বিজেপি-র দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিয়ে জোর চর্চা। তার মধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়েছেন, তাঁর সামনে হামলার ঘটনা ঘটলে, সরাসরি মাথায় গুলি করতেন তিনি। কিন্তু অভিষেকের এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। শাসকদলের নেতা তথা অলিখিত ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকার হিসেবে যাঁর নাম একপ্রকার প্রতিষ্ঠিত বাংলার রাজনীতিতে, প্রকাশ্যে তিনি এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা
মঙ্গলবার বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের হাতে আক্রান্ত হন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে দেখতে বুধবার এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) পৌঁছন অভিষেক। সেখান থেকে বেরিয়ে তীব্র আক্রমণ করেন বিজেপি-কে। অভিষেক বলেন, "আমি দেবজিৎবাবুকে বললাম, আপনার জায়গায় যদি আমি থাকতাম, আমার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন জ্বালানো হতো, এরকম হামলা হতো, তাহলে আমি (কপালে আঙুল ঠেকিয়ে) এখানে শ্যুট করতাম, মাথার উপরে।"
অভিষেকের এই মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "বাংলার তথাকথিত যুবরাজ, তিনি আগামী দিনে যেটা তৈরি করবেন, সেই তৃণমূলের পুলিশ মানুষের মাথা লক্ষ্য করে, কপাল লক্ষ্য করে গুলি করবে। আজ তিনি তার আভাস দিয়েছেন। ট্রিগার হ্যাপি পুলিশ এটাকে ইংরেজিতে বলা হয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী দিনে ট্রিগার হ্যাপি পুলিশ বাংলাকে উপহার দেবেন।" গুলি চললে তাঁরাও ছেড়ে কথা বলতেন না বলেও মন্তব্য করেন সুকান্ত।
এসএসকেএম থেকে বেরিয়ে বামেদেরও একহাত নেন অভিষেক। গতকালের হাঙ্গামা নিয়ে বামেরা কেন বিবৃতি দেয়নি, কেন এর বিরুদ্ধে মুখ খোলেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। একই সঙ্গে বামেদের একাংশই এই মুহূর্তে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ""কই কাল থেকে তো একটি বিবৃতিও দেয়নি সিপিএম! একবারও বলল না তো যে আমরা এই ধরনের আন্দোলন সমর্থন করি না! কারণ এদের গুন্ডারা, হার্মাদরাই এখন বিজেপি-তে ঢুকে পড়েছে। আগে যে কায়দায় বাংলায় অশান্তি করত, এখনও তা-ই করছে। শুধু জার্সি পাল্টে ফেলেছে। আগে ছিল লাল, এখন পরনে গেরুয়া জার্সি। লাল ঝান্ডা ফেলে গেরুয়া পতাকা তুলে নিয়েছে হাতে। ইনকিলাম জিন্দাবাদের পরিবর্তে এখন মুখে জয় শ্রী রাম।"
এর পাল্টা সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "ছোট তো অনেক! পিসির কর্তৃত্বে বড় হচ্ছে। কড়া কথা বলতে পারব না আমি। পিসিকে জিজ্ঞেস করুক। পিসির সবচেয়ে বড় ঘনিষ্ঠ যুবনেতা এখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গিয়েছে। বামেদের দিকে না তাকিয়ে, আয়নায় দেখুন।"
তবে অভিষেক পূর্বতন বাম সরকারে থেকে নিজেদের সচেতন ভাবেই আলাদা করে দেখিয়েছেন। তাঁর কথায়, "পুলিশের কাছে সহজ উপায় ছিল। গুলি চালালে, ১০টা লোক মরলেই আন্দোলন বন্ধ হয়ে যেত। ২১ জুলাই, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, সিপিএম-এর আমলে তেমনই হয়েছে। যাঁরা প্রশ্ন তোলেন বাংলায় কী পরিবর্তন হয়েছে, এটাই সেই পরিবর্তন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আমলে যে পুলিশ রয়েছে রাজ্যে, তারা সংবেদনশীল, সংযত এবং ধৈর্যশীল।"