সোদপুর: প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে এবার বিরোধীদের বার্তা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। জানালেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ED এবং CBI-এর মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তিনি। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত, কিছু বাকি থাকেনি। কিন্তু ED-CBI তাঁর 'কাঁচকলা' করেছে, আগামী দিনেও 'কাঁচকলা' করবে। ED-CBI কেশাগ্র স্পর্শ করে দেখাক বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অভিষেক। (Abhishek Banerjee)


শনিবার সোদপুরে জগন্নাথ ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন অভিষেক। ওই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও। আর সেখানে বক্তৃতা করতে গিয়ে অভিষেক বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার বৈমাতৃসুলভ আচরণ করে, একাধিক শর্ত আরোপ করে আয়ুষ্মান ভারত চালু করে বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করে রাখতে চেয়েছিল। কোনও রকম শর্ত ছাড়া, কোনও রকম মাপকাঠি ছাড়া, ছোট থেকে বড়, আট থেকে ৮০, বাংলার ১০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে সরাসরি চিকিৎসা পরিষেবার অধীনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫ লক্ষ টাকার কভারেজ দিয়েছেন, যাতে সকলে ভাল চিকিৎসা পরিষেবা পান।" (Kolkata News)


অভিষেক আরও বলেন, "স্বাস্থ্যসাথী থেকে শুরু করে, বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন সময় আমাদের সরকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যারা বলত, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শিল্পে সরকার কিছু করেনি, আইনশৃঙ্খলা-পরিকাঠামোয় সরকার কিছু করেনি, আমি একাধিক বার তথ্য় ও পরিসংখ্যান নিয়ে লড়াই করতে বলেছি। জায়গা বেছে নিন, যে আপনারা ৩৪ বছরে আপনারা কী করেছেন, আমাদের সরকার ১৪ বছরে কী করেছে। ১০ শতাংশ কাজের হিসেব নিয়ে আসবেন, তার পর আঙুল তুলবেন মা-মাটি-সরকারের দিকে।"

 

অভিষেকের বক্তব্য, "রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে, বাংলাকে ধর্মের নামে অশান্ত করতে চাইছেন অনেকে। আমি সকলকে অনুরোধ করব, বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি বজায় রেখে, এলাকার শান্তি, শৃঙ্খলা এবং সম্প্রীতি যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, আমাদের প্রত্যেককে সজাগ থাকতে হবে, সচেতন থাকতে হবে। কেউ কেউ যাই বাংলায় যাতে আগুন জ্বলে, বাংলার টাকা আটকে দিয়ে বাংলাকে ভাতে মারতে চায়। আমাদের সরকার থাকাকালীন বাংলার একটি মানুষকেও ভাতে মারার দুঃসাহস কেন্দ্রীয় সরকার দেখাতে পারবে না। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে যাচ্ছি। এরা আগেও চেষ্টা করেছে। গরিব মানুষের ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকেছে, আবাস যোজনার টাকা আটকেছে।"

 

এ প্রসঙ্গে চাকরি বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন অভিষেক। তিনি বলেন, "এখানে রাজনৈতিক কথা বলা ঠিক নয়। কিন্তু এই যে SSC নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়...আদালতকে সম্মান করি, মর্যাদা দিই, বিশ্বাস করি বিচারব্যবস্থা এখনও মাথানত করেনি, বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ। কিন্তু কোনও রায় যদি আমার পছন্দ না হয়, সেই রায়ের সমালোচনা করার অধিকার ভারতীয়দের দিয়েছে সংবিধান। এই রায়ের মাধ্যমে কোথাও যেন আমার মনে হচ্ছে, বিজেপি-র যে বৈমাতৃসুলভ আচরণ, বাংলার মানুষের প্রতি ধারাবাহিক যে বৈমাতৃসুলভ আচরণ এবং মানসিকতা, তার প্রতিফলন এই রায়ে দেখতে পেয়েছি। আমি কেন বলছি! প্রায় ৫৯ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডার। ১০-১৫ জন ভুল করেছে, ৬০ লক্ষ গরিব মানুষের টাকা বন্ধ। বাড়ির ক্ষেত্রে যদি ১০০০ জন ভুল করে থাকে, তাহলে ১০০০ জনকেই শাস্তি দিতে হবে। আপনি ১০০০ জনের জন্য় ১৭ লক্ষের বাড়ির আটকে রাখতে পারেন না। যদি আযোগ্য কেউ চাকরি পেয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক, তদন্ত হোক, তাকে শ্রীঘরে পাঠান, চাকরি যাক, টাকা ফেরত দেওয়া করান। কিন্তু কিছু অযোগ্যের জন্য আপনি ১৬-১৭ হাজার যোগ্যের চাকরি কেড়ে নিতে পারেন না। আমি এখামে বিজেপি-র ধারাবাহিকতা দেখছি, যে একজন ভুল করেছে, পুরোটা বাতিল করে দাও।" হাসপাতালে একজন যদি ভুল করেন, তাহলে হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া উচিত কি? প্রশ্ন তোলেন অভিষেক।

 

অভিষেক সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, "একজন বা দু'জন ব্যবস্থা নিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হোক। কেউ বারণ করছে না। কিন্তু পাঁচ জনের ভুলের শাস্তি ৫০০০ বা ১০০ জনের ভুলের শাস্তি আপনি ১৭ লক্ষকে দিতে পারেন? ১৭ লক্ষ কম বলছি। খালি আবাস আর আবাস প্লাসের কথা বলছি শুধু। প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। ৫০ লক্ষের বাড়ির টাকা কেন্দ্র আটকে রেখেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কত টাকা দিয়েছে কেন্দ্র? স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলুন শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে যে অন্য রাজ্য কত টাকা পাচ্ছে, আর বাংলা কত পাচ্ছে। আমি যখন ডায়মন্ড হারবারে ২০২৪ সালের প্রথম দিকে বার্ধক্য ভাতার শ্রদ্ধার্ঘ প্রকল্প শুরু করি, আমি যাতে সেটা না করতে পারি, তার জন্য আয়কর কর্তৃপক্ষকে দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে আমাকে ভয় দেখাতে। ১২ লক্ষ মানুষকে নিখরচায় চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সেবাশ্রয় প্রকল্পও যাতে না করতে পারি, তাতেও চিঠি করানো হয়, যাতে পিছিয়ে যাই আমি। আমি জোর গলায় বলছি, গত পাঁচ-ছ'-সাত বছর ধরে ED-CBI-এর বিরুদ্ধে লড়াই করছি। নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্ট, হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট। তোমার CBI আমার কাঁচকলা করেছে এবং আগামী দিনে কাঁচকলা করবে। আমি মানুষকে পরিষেবা দিতে এসেছি, দেব। কেশাগ্র স্পর্শ করে দেখাও। মানুষের ক্ষমতা কী, বুঝিয়ে দেব।" শুধু ভোটে জেতা লক্ষ্য নয়, মানুষের সেবায় নিজেদের যুক্ত করতে হবে বলে দলের নেতাদেরও বার্তা দেন অভিষেক। অভিষেক জানিয়েছেন, যাদের কাজ কুৎসা করা, তারা করবে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের সেবা করে যেতে হবে।