কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: তৃণমূলে (TMC) নবীন-প্রবীণ বিতর্কের মধ্যেই মমতার বাড়িতে অভিষেক (Abhishek Banerjee)। কালীঘাটে মমতার বাড়িতে অভিষেকের যাওয়া নিয়ে জল্পনা। আজ সন্ধে ৬টা নাগাদ কালীঘাটে মমতার বাড়িতে পৌঁছন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। রাত প্রায় ৮টা বেজে পাঁচ মিনিট নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে বেরোন অভিষেক।


সূত্রের খবর, সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের পাঁচজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সূত্রের খবর, ২ দিন আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন তিনি আপাতত তাঁর লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের মধ্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ থাকতে চান। দলের কোনও নীতি নির্ধারণে এখনই থাকতে চান না, এমনটাও জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব। দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে সরব হয়েছেন কুণাল ঘোষ। কখনও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, কখনও ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য। তার পরে কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) পাল্টা মন্তব্য। সম্প্রতি একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে। এমন আবহে সোমবার সন্ধেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে কি এটা দ্বন্দ্ব সংক্রান্ত কোনও বিষয়ে বৈঠক? নাকি অন্য কোনও বিষয়ে বৈঠক। এমন প্রশ্ন উঠছে।  


এদিনই কার্যত বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা নিয়ে যে খবর বিভিন্ন সূত্রে ভাসছে, সেই প্রসঙ্গেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেছিলেন, 'এই নির্বাচনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি লড়াই করেন, নিশ্চিতভাবেই তিনি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছিয়ে যাবেন না। যদি লড়াই করেন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই তিনি লড়াই করবেন। জোড়াফুলকে সামনে রেখেই তিনি লড়াই করবেন, এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।' এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে কুণাল ঘোষের তোপ, 'অভিষেকের পিছিয়ে যাওয়ার কথা আসছে কী করে? সুব্রত বক্সির বাক্য গঠনে সমস্যা আছে। অভিষেকের লড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্তিশালী করার জন্য। অভিষেকের ক্ষেত্রে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার হচ্ছে কেন?'


দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের নেতৃত্ব নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হয়ে যাবে। দেশের রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন বলেই বাংলায় আলোচনায় থাকে।' এই নিয়েও তোপ দেগেছেন কুণাল, তাঁর দাবি, 'সুদীপদা তো দেখলেন, দিল্লিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কী ঝাঁঝ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে, বাংলা ছাগলের তৃতীয় সন্তান হবে, এটা উনি কেন বললেন? অন্ধ আনুগত্য দেখাতে চাইছেন, সামনে থাকলে ভাব সম্প্রসারণ শুনিয়ে দিতাম।' পাশাপাশি, নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার নিয়েও দলের একাংশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন কুণাল। 


বেশ কিছুদিন ধরেই ক্রমাগত তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে রাজনীতিতে বয়সসীমা থাকা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ নিয়ে কিছুদিন আগেই কুণাল ঘোষ দলে নবীনদের আরও বেশি দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। সেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন কল্য়াণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা। ফলে দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত বারবারই সামনে এসেছে। সেই আবহেই সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে গেলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়। 


আরও পড়ুন: 'আগামী প্রজন্মকে তুলে না আনলে, গতি বিঘ্নিত হবে' ফের সওয়াল কুণালের