বিটন চক্রবর্তী, শিবাশিস মৌলিক ও ঝিলম করঞ্জাই, পূর্ব মেদিনীপুর: হাইভোল্টেজ সভা। বিরোধী দলনেতার বাড়ির কাছাকাছি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ঘিরে এমনিতেই তুঙ্গে ছিল তরজা। সেই সভার আগে পূর্ব মেদিনীপুরে মারিশদার গ্রামে গেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘুরে দেখলেন গ্রামের পরিস্থিতি। গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনলেন। একাধিক অভিযোগের কথা শুনে কাঁথির সভাতেও তুললেন সেই কথা। তৃণমূল পরিচালিত মারিশদা পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান এবং স্থানীয় অঞ্চল সভাপতিকে ইস্তাফার নির্দেশ দেন তিনি।


হঠাৎ গ্রামে অভিষেক:
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আবহে, কাঁথির সভার আগে হঠাৎই মারিশদার গ্রামে পৌঁছলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেককে দেখেই অভিযোগের ঝুলি খুলে বসেন গ্রামবাসীরা। বাড়ির অবস্থা, রাস্তার অবস্থা নিয়ে অভিযোগ করেন গ্রামবাসীরা। অভিষেককে বলতে শোনা যায়, 'আপনার কী অসুবিধে হচ্ছে, বাড়ি ঠিকমতো হয়নি কেন?' তা শুনেই এক বাসিন্দা বলেন, 'না আমরা পাইনি।' ফের অভিষেক জিজ্ঞাসা করেন, 'বাড়ি পাননি?' তখন ওই বাসিন্দা বলেন, 'না। ওটা হচ্ছে আমার বাবার বাড়ি। বাড়িটা দেখুন স্যর, কী অবস্থা!' তা দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেন, 'এখানে আপনি থাকেন?' তখন ওই বাসিন্দা বলেন, 'আমার বাবা আর আমি। এখানে আমাদের হয়রানি করছে।'


শনিবার, শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ির অদূরে প্রভাতকুমার কলেজ মাঠে সভা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সভাস্থলে যাওয়ার পথে, হঠাৎই মারিশদার বানিয়া গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয়। গাড়ি থেকে নেমে সটান পাড়ার মধ্যে ঢুকে যান অভিষেক। কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে। তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখেন তিনি। অভিষেককে হাতের কাছে পেয়ে অভাব-অভিযোগের ঝুলি খুলে বসেন স্থানীয়দের একাংশ।


অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চান তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কিনা। বাসিন্দারা বলেন, 'আমরা কিচ্ছু পাইনি। আমরা কোনও কিছু পাইনি। কোনও দিন কোনও সুযোগ সুবিধা পাইনি। আমফানের ২০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে, আমাদের ৫ হাজার টাকা করে ধরিয়ে দিয়েছে। গাছ ভেঙে ঘর পড়ে গিয়েছে। আমাদের রাস্তাও নেই। রাস্তা নেই, জল নিকাশি নেই।' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জিজ্ঞাসা করেন, 'আপনাদের মূল সমস্যা হচ্ছে বাড়ি নেই, ঘর নেই?' সমস্বরে সবাই হ্য়াঁ হ্যাঁ বলে ওঠেন, পাশাপাশি আরও অভিযোগ করে বলেন, টিউবওয়েলও নেই।


কে পঞ্চায়েত প্রধান?
অভিযোগ শুনে পঞ্চায়েত প্রধানের খোঁজ নেন তিনি। অভিষেক জিজ্ঞাসা করেন, 'পঞ্চায়েত প্রধানের নাম কী এখানকার? ঝুমু মণ্ডল?' এলাকায় জল জমে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করেন অভিষেক। জল  নামতে কত দিন লাগে তা জিজ্ঞাসা করলেই বাসিন্দারা জানান, এলাকায় জল জমে গেল জল নামতে মাসখানেক লেগে যায়। জল নিকাশির সেরকম কোনও ব্যবস্থা নেই বলেও অভিযোগ করেন। কথা বলতে বলতে অনেকেই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। এরপরই কাঁথির সভা থেকে তৃণমূল পরিচালিত মারিশদা পঞ্চায়েতকে কড়া হুঁশিয়ারি দেন অভিষেক।


শুভেন্দুর কটাক্ষ: 
অভিষেকের গ্রাম সফর নিয়ে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, 'কয়েকদিন আগে ওর পিসি নাটক করেছিল। এবার মারিশদায় গিয়ে উনি নাটক করলেন।'


আরও পড়ুন: কোচবিহারে যাত্রী বোঝাই সরকারি বাসে আগুন, আতঙ্কে হুড়মুড়িয়ে নামল যাত্রীরা