কলকাতা: বিগত ১২ দিনে পরপর তিনজন মডেল-অভিনেত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার। আজ সকালেই পাটুলির বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে মডেল মঞ্জুষা নিয়োগীর (Manjusha Neogi) দেহ। কী কারণে একের পর এক এমন ঘটনা, উঠছে একাধিক প্রশ্ন। এই প্রসঙ্গে ফোনে ধরা হয় অভিনেত্রী ইন্দ্রাণী হালদারকে (Indrani Halder)। কী বললেন তিনি?


একের পর এক মডেল-অভিনেত্রীর রহস্যমৃত্যু, কী বলছেন ইন্দ্রাণী হালদার?


অভিনেত্রীকে ফোনে ধরা হলে তিনি বলেন, 'ঘটনাগুলো খুবই খারাপ। এগুলো তো মানুষকে আরও বিধ্বস্ত করে তোলে। বিশেষত অভিনয়কে যাঁরা পেশা হিসেবে এখন বেছে নিচ্ছেন। একটা সময় ছিল যখন অভিনয়কে পেশা করা যায় সেটাই কেউ ভাবতে পারতেন না। অভিনয় যে একটা সিরিয়াস পেশা হতে পারে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা ছেলেমেয়েরা ভাবতে শুরু করেছে।'


তিনি আরও বলেন, 'আমার মনে হয়, শুধু অভিনয় পেশার সঙ্গে যুক্তরাই নন, এখনকার জেনারেশনের মধ্যে সহনশীলতা, ধৈর্য্য সেটা বোধ হয় সাধারণভাবেই কম। এখন যে একটা ছোঁয়ায়, একটা মেসেজে বা একটা রিলে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, সেটার ফলে পৃথিবীটা ছোট হয়ে গেছে। সবকিছুই একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যায় এখন। ফলে এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে প্রেম বিচ্ছেদ, সাফল্য, পতন, ডিপ্রেশন, সেই থেকে সবকিছুই যেন খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। এই সবকিছুই তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে অনেকেই ব্যালেন্সটা হারিয়ে ফেলে। সিনেমায় একটা কথা বলে, সাইলেন্স আর ব্যালান্স খুব জরুরি। এই দুটোর মধ্যে তারতম্য যখনই হারিয়ে যায় তখনই এমন ঘটনা দেখা যায়। যেটা আমি একেবারেই সাপোর্ট করি না। ডিপ্রেশন, উত্থান পতন কেবল অভিনয় বলে না, জীবনের সবকিছুতেই থাকবে। আমাদের সাধারণ জীবনও কখনও একরকম চলে না সবসময়ে। তা বলে জীবন নষ্ট করে ফেলব? তা বলে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করব? এটা কাজের কথা নয় কোনও। এটা কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন।'


আরও পড়ুন: Manjusha Neogi Death: জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হল মঞ্জুষার স্বামীকে


অভিনেত্রীর মতে, 'আমার এই ৩৬ বছরের কেরিয়ারে বহুবার উত্থান পতন এসেছে। ডিপ্রেশনে ভুগেছি। আমি সেটা কীকরে কাটিয়ে উঠেছি? আমি সৌভাগ্যবান যে এত বড় বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমার এমন সময় এসেছে যখন আমার কাছে সিরিয়ালের কাজ ছিল কিন্তু ভাল ছবি পাচ্ছিলাম না। আমি একদিন সৌমিত্র আঙ্কলকে (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) দুঃখ করে বলেছিলাম যে ভাল লাগছে না। উনি বুঝিয়েছিলেন যে সব ঠিক হবে। সব ভুলে আবার কাজে মন দিলাম। সত্যিই আবার ছবির কাজ পেলাম। আমি চেষ্টা করি আমার পরের প্রজন্মকে সবসময় মোটিভেট করতে, ডিপ্রেশনে থাকলে মজা করে বোঝাতে, সঙ্গ দিতে। সকলের কাছে তো পৌঁছতে পারি না। তাই এই ঘটনাগুলো দেখে কষ্ট হয়। তখন মনে হয় কোথায় যেন আমিই হেরে গেলাম। আমরা সিনিয়ররা চেষ্টা করি সকলের পাশে থাকার। পরের প্রজন্মের কাছে তাই আমার বার্তা যেই পেশাতেই থাকো না কেন, দয়া করে হাল ছেড়ে দিও না।'