কলকাতা: প্রদেশ কংগ্রেসে অধীর রঞ্জন চৌধুরী কি এখন প্রাক্তন? এ নিয়ে জল্পনার মধ্যেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে দেখা গেল রাজ্য বিজেপি-র একাংশকে। রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মতে, কংগ্রেস অধীরের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। অধীর সঠিক খেলোয়াড়, কিন্তু ভল দলে রয়েছেন বলে মন্তব্য করলেন তিনি। বিজেপি-কে সমর্থন ছাড়া এ মুহূর্তে অধীরের কাছে অন্য রাস্তা নেই বলে মন্তব্য করলেন তিনি। বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ যদি বলছেন, নিজের আলাদা দল তৈরি করা উচিত অধীরের। (Adhir Chowdhury)


প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অধীর। কিন্তু দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সেই নিয়ে জল্পনার মধ্যেই রাজ্যে কংগ্রেসের পর্যবেক্ষক অধীরকে 'প্রাক্তন' প্রদেশ সভাপতি বলে উল্লেখ করেন। এর পর প্রকাশ্যে কংগ্রেস সভআপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন অধীর। তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়ে গিয়ে থাকলে, তাঁকে সেটা জানানো ভদ্রতা, সভ্যতার মধ্যে পড়ে বলে মন্তব্য করেন। (West Bengal BJP)


সেই নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যেই রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ অধীরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অধীর প্রসঙ্গে শমীক বলেন, "অধীর চৌধুরীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে কংগ্রেস। উনি সঠিক খেলোয়াড়, কিন্তু ভুল দলে রয়েছেন। কংগ্রেসে থেকে তৃণমূলের বিরোধিতা করা যাবে না। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে পারবেন উনি, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন খড়্গে সাহেবরা।" 


আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: রাজ্য সভাপতির পদ নিয়ে গুঞ্জন, সেই আবহেই বিধানসভায় দিলীপের জন্মদিন পালন শুভেন্দুর, নেপথ্যে কোন অঙ্ক?


তাহলে কি বিজেপি-ই অধীরের জন্য সঠিক দল? প্রশ্নের উত্তরে শমীক বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের মানুষ বাইনারি সেট করে দিয়েছেন। লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র। তৃণমূলকে যদি কেউ হারাতে পারে, বিজেপি পারে। তাই অধীরবাবু যদি মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যতের জন্য তৃণমূলের বিসর্জন একান্ত প্রয়োজন, তাহলে বিজেপি-কে সমর্থন করা ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই ওঁর।"


এককালে কংগ্রেস করা সৌমিত্র যদিও বলেন, "অধীরবাবুর সঙ্গে কাজ করে যতটা বুঝেছি, উনি হয়ত কংগ্রেস ছাড়বেন না। মুর্শিদাবাদ এবং মালদা যে লোকেশন, তাতে নিজের দল খুললে উনি ভাল জায়গায় যেতে পারবেন। আমাদের দলের সিনিয়র নেতা হয়ত ওঁকে স্বাগত জানাতে পারেন। কিন্তু মুর্শিদাবাদ, মালদায় ওঁর যে জায়গা রয়েছে, পাঁচবারের সাংসদ উনি, তাতে নিজের মতো ভাবনা ভাবতে পারেন, ঝুঁকি নিতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা উনি তৃণমূল, মমতার বিরোধী ১৯৯৬ সাল থেকে। তৃণমূলে উনি যাবেন না বলেই মনে হয়। কংগ্রেস ছেড়ে দেবেন বলেও মাথায় আসছে না।"


জাতীয় রাজনীতিতে I.N.D.I.A জোটে শামিল, মমতার বিরোধিতা করাতেই দলীয় নেতৃত্ব তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন অধীর। এমনকি অধীরের জন্যই বাংলায় তৃণমূল-কংগ্রেসের আসন সমঝোতা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠছে জোড়াফুলের তরফে। সেই আবহে অধীরকে নিয়ে এই টানাপোড়েনে মুখ খুলেছেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া দু'টি আসন যদি গ্রহণ করে নিতেন, তাহলে আজ অধীর চৌধুরী সাংসদ হতে পারতেন, মালদাও পেতেন। যৌথ ভাবে আরও দু'চারটি আসন জুড়ে যেত। বিজেপি নেমে যেত ৬-৭ আসনে। অধীরের বাধার জন্যই তা সম্ভব হয়নি, তা প্রথম থেকেই উপলব্ধি করেছি আমরা। উনি চলে গেলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রাস্তা আরও প্রশস্ত হবে। বাংলার প্রয়োজনে কোথাও কোথাও নিজেদের পৃথক অবস্থান রাখতেই হয়। কিন্তু বিজেপি-র বিরুদ্ধে জাতীয় স্তরে অবশ্যই আমরা I.N.D.I.A জোটে আছি।" যদিও প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় জানান, অধীরকে নিয়ে অন্য দলগুলিকে এত ভাবতে হবে না। অধীর প্রদেশ কংগ্রেসের নীতি অনুযায়ীই চলেছেন। বিজেপি-ও নিজেদের নিয়ে ভাবুন। কংগ্রেস নিজেরটা বুঝে নেবে।