কলকাতা: হিন্দি চাপিয়ে দেওয়াকে ঘিরে বিতর্ক চলছেই। সেই আবহেই নিজের ভাষায় পঠন-পাঠনের দাবি উঠল বাংলাতেও। সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠনের পরিকাঠামো তৈরি-সহ ন'দফা দাবিতে রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টা চাক্কা জ্যাম করে বিক্ষোভ দেখাল ভারত জাকাত মাঝি পরগানা মহল (Adivasi Protests in West Bengal)। আদিবাসী সংগঠনের এই অবরোধের জেরে দীর্ঘক্ষণ আটকে রইল বাস, গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক। পথে বেরিয়ে দিনভর ভোগান্তির শিকার হলেন সাধারণ মানুষ (Chakka Jam)।
রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টা চাক্কা জ্যাম করে বিক্ষোভ দেখাল ভারত জাকাত মাঝি পরগানা মহল
বুধবার পশ্চিম বর্ধমান, মালদা, উত্তর দিনাজপুরে দফায় দফায় বিক্ষোভ, অবরোধ চোখে পড়ল। তার জেরে কোথাও রাস্তার মাঝখানে ধামসা-মাদল বাজিয়ে প্রতিবাদ জানাতে দেখা গেল বিক্ষোভকারীদের। কোথাও আবার আটকে, তির-ধনুক হাতে দাঁড়িয়ে পড়লেন তাঁরা। অবরোধের জেরে ব্য়স্ততম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর ব্যস্ত সময়ে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল গাড়ি, বাস, পণ্যবাহী ট্রাককে।
সাঁওতালি ভাষায় পঠনপাঠনের পরিকাঠামো তৈরি-সহ ৯ দফা দাবিতে ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের ডাকে এ ভাবেই জেলায় জেলায় চলল ১২ ঘণ্টার চাক্কা জ্যাম। পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়, মোড়গ্রাম রাজ্য সড়ক আটকে বিক্ষোভ দেখান আদিবাসীরা। তার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কলকাতা থেকে দুর্গাপুর-আসানসোল যাওয়ার মূল রাস্তা।
এর ফলে, রাস্তায় বেরিয়ে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হন সাধারণ মানুষ। রাস্তায় আটকে পড়া এক মহিলা বলেন, "হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। আটকে রয়েছি। কখন পৌঁছব জানি না।" এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে এক বিক্ষোভকারী বলেন, "সাঁওতালি ভাষার বোর্ড গঠন করতে হবে। বারবার দাবি করার পরেও পূরণ না হওয়ায় অবরোধে নেমেছি।" আর এক বিক্ষোভকারী বলেন, "পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। সাঁওতালি ভাষায় শিক্ষার সঠিক পরিকাঠামো নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোথায় যাবে, বাধ্য হয়ে পথে নেমেছি।"
আরও পড়ুন: Anubrata Mandal: অনুব্রত প্রভাবশালী, জামিন দিলে বিচারপ্রক্রিয়ার উপর অশুভ প্রভাব পড়বে, জানাল আদালত
নিজের ভাষায় শিক্ষার দাবিতে মালদার গাজোলের আলমপুরে তfর-ধনুক হাতে নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেল আদিবাসীদের একাংশকে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে দেখানো হল বিক্ষোভ। চাক্কা জ্যাম কর্মসূচির জেরে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে ৩৪ নম্বর জাতীয় জাতীয় সড়কে দেখা গেল গাড়ির সারি।
পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে আদিবাসী সংগঠনের কর্মসূচির জেরে জঙ্গলমহলেও দেখা গেল একই ভোগান্তির ছবি। পুুরুলিয়া জেলার একাধিক জায়গায় জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ-আন্দোলন। ঝাড়গ্রাম জেলার ১২টি জায়গায় দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ ছিল জাতীয় এবং রাজ্য সড়ক। লালমাটির জেলা বাঁকুড়াতেও দেখা গেল একই ছবি।
রানিগঞ্জ যাওয়ার ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ছাড়াও, আদিবাসীদের অবরোধের জেরে বাঁকুড়া-দুুর্গাপুর, বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া-রানিবাঁধ রাজ্য সড়কে দীর্ঘক্ষণ থমকে যায় একাধিক গাড়ি। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে রাজ্য সড়কের ওপর আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান আদিবাসীরা।
ডেবরা ও নারায়ণগড়েও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চলে আন্দোলন।
পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে আদিবাসী সংগঠনের কর্মসূচি
এ নিয়ে বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেন, "ভারত সরকার ও বিজেপি আদিবাসী সংগঠনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পশ্চিমবঙ্গে সাঁওতালি ভাষা ঠিকমতো মর্যাদা পাচ্ছে না। স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো নেই। রাজ্য সরকারের বিষয়টি দেখা উচিত।" যদিও তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত ভাষাকে মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ধীরে ধীরে সবই হবে। তবে অবরোধ কোনও সমাধান নয়।"
তবে এখানেই থামতে নারাজ আদিবাসী সংগঠন। এই আন্দোলনে কাজ না হলে, আরও বড় বিক্ষোভের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদিবাসী সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা।