কলকাতা: জল্পনা সত্যি করে BJP-তে যোগদান আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর। একদিন আগেই কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেন। পরবর্তী পদক্ষেপ কী, তা জানতে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দিলেন BJP-তে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং BJP-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের উপস্থিতিতে হাতে তুলে নিলেন পদ্ম-পতাকা। (Koustav Bagchi)


বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য BJP-র নেতৃত্ব। শুভেন্দু এবং সুকান্তই কৌস্তভকে স্বাগত জানান দলে। এদিন শুভেন্দু বলেন, "২০২১ সালের আগে BJP-র অনেক কর্মী বড় দায়িত্ব পেয়েছেন। আবার লক্ষ্যে না পৌঁছে অনেকে পাল্টিও খেয়েছেন। এতে দলে যোগদান করানো নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। কিন্তু আমি পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী করার জন্যই BJP-তে যোগদান করছেন এঁরা। কোনও পূর্ব শর্ত দেননি। রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং সুকান্ত-সহ সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই যোগদানপর্ব শুরু করেছি।" (Koustav Bagchi Joins BJP)


কৌস্তভের প্রশংসা করে শুভেন্দু বলেন, "গত দু'আড়াই বছরে জ্বলন্ত ইস্যুগুলির ক্ষেত্রে, দলের বাইরে গিয়ে, বাংলার মানুষের আবেগকে মর্যাদা দিয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন। সশরীরে বিভিন্ন এলাকাতেও গিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে, অনেক আইনি লড়াইও করতে হয় তাঁকে। মোদিজি-কে ৪০০-র বেশি আসন দিয়ে তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী করব আমরা। গৃহমন্ত্রী যে ৩৫ আসনের লক্ষ্য দিয়েছেন বাংলা থেকে, বাংলার একটা বড় অবদান থাকবে। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে, দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে কাজ করব আমরা।"


আরও পড়ুন: Sheikh Shahjahan Arrested: গ্রেফতার শেখ শাহজাহান, 'বিজেপির লাগাতার চাপে বাধ্য হয়ে পুলিশ', মত দিলীপ-সুকান্তর


বুধবারই কংগ্রেসের দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেন কৌস্তভ। কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকেও। কেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত, তার জবাব দিতে গিয়ে কৌস্তভ জানান, রাজনৈতিক সত্তা হারিয়েছে কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের আর গুরুত্ব নেই পশ্চিমবঙ্গে।


এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হয়ে গতকাল কৌস্তভ বলেন, "কংগ্রেস কেউই ছাড়ে না, ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে রাজ্য তৃণমূলই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও গুরুত্ব নেই। কংগ্রেস তার রাজনৈতিক সত্তা হারিয়েছে। সেই কারণেই পদত্যাগ বলে দাবি করেছেন কৌস্তভ।" মহাজাতি সদনে প্রদেশ কংগ্রেস তাঁকে অসম্মানও করে বলে জানান কৌস্তভ। 


কৌস্তভ আরও বলেন, "অনেক দিন ধরেই দলে কিছু জিনিস ঠিক চলছিল না। বার বার সেগুলি তুলে ধরেছিলাম। কিন্তু দল যে কোনও পরামর্শ চায় না, তা স্পষ্ট হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে একের পর এক শোচনীয় পরাজয় হয়েছে কংগ্রেসের। এবার হ্যাট্রিক হতে চলেছে। সামনে নির্বাচন, কংগ্রেস ব্যস্ত যাত্রা নিয়ে। জেতার কোনও ইচ্ছেই নেই বলে মনে হচ্ছে। এই দলে থাকার অর্থ আত্মসম্মানের সঙ্গে আপস করা। সাম্প্রতিক সন্দেশখালি ছাড়াও একাধিক ঘটনা ঘটেছে বাংলায়। BJP, কেন্দ্রের কমিটি সেখানে গিয়েছে কিন্তু কংগ্রেস নেতৃত্বের কেউ কোনও কথা বলেননি। কংগ্রেস কর্মীরা উৎসাহ হারাচ্ছেন।"


লোকসভা নির্বাচনের আগে জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে I.N.D.I.A জোট গড়েছে কংগ্রেস। গোড়া থেকেই সেই জোটের বিরোধিতা করে আসছিলেন কৌস্তভ। 'এই অপমানের চেয়ে মৃত্যু অনেক ভাল' বলেও মন্তব্য করেন কৌস্তভ। সেই নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব যেমন বাড়ছিল, তেমনই রাজ্যের BJP নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সমীকরণও চোখ এড়ায়নি কারও। অতি সম্প্রতি কৌস্তভের বাড়ির পুজোয় হাজির হন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তার আগে চাকরিপ্রার্থীদের মিছিলেও পাশাপাশি হাঁটতে দেখা যায় দু'জনকে। একাধিক বার শুভেন্দুর ভূয়সী প্রশংসাও করেন কৌস্তভ। তাই কৌস্তভ BJP-তে ঝুঁকছেন বলে শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার সেই জল্পনা সত্যি হল।