পার্থপ্রতিম ঘোষ, নদিয়া : কাবুল যখন জ্বলছে, তখন একে একে  আফগানিস্তান থেকে জীবন হাতে করে বাড়ি ফিরছেন বাংলার ছেলে-মেয়েরা। কাজের সূত্রে, রোজগারের তাগিদে কেউ আফগানিস্তানে কাটিয়েছেন ২ বছর , কেউ ৪ বছর। গোলাগুলির শব্দ কানে এসেছে, কিন্তু হঠাত্ করে যে চেনা পরিবেশটা রাতারাতি ত্রাসের রাজত্ব হয়ে উঠবে ভাবেননি কেউই। তাঁদের কথায় বড় টাকার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখতে চেয়েছেন এঁরা। অনেকে এখনও আটকে আতঙ্কের আফগানিস্তানে। 
মৃত্যুপুরী আফগানিস্তান থেকে নদিয়ার তাহেরপুরের বাড়িতে ফিরেছেন সুপ্রিয় ধর। কাবুলে ন্যাটোর সেনা ছাউনিতে শেফের কাজ করতেন বাঙালি যুবক। কাবুল থেকে দোহা হয়ে দেশে ফিরেছেন সুপ্রিয় ধর। গতকাল তিনি পৌঁছন তাহেরপুরের বাড়িতে। তাঁর চোখেমুখে এখনও স্পষ্ট আতঙ্ক। আর কোনওদিন আফগানিস্তানে যাবেন না, সাফ জানিয়েছেন ন্যাটোর সেনা ছাউনিতে কাজ করে আসা বাঙালি যুবক।
মার্কিন সেনা ছাউনিতে কাজ। আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা। মাসের শেষে ভাল বেতন। এভাবেই কেটেছে তাঁর সাড়ে ৪ বছর । তালিবান আসার আগেও যে পরিবেশ খুব শান্ত তা নয়। কানে আসত গোলাগুলির শব্দ। কিন্তু ন্যাটোর ছাউনিতে কোনওদিনই নিজেদের অসুরক্ষিত মনে হয়নি সুপ্রিয়র। তবে ১০ অগাস্টের পর থেকে বদল গেল চিত্রটা। কাবুলে ঢুকে পড়ল তালিবান। ছড়াল সস্ত্রাস । আতঙ্ক গ্রাস করল চারিদিক।  হামিদ কারজাই এয়ারপোর্টে ক্যাম্পে থাকতেন তাঁরা। চোখের সামনে দেখেছেন ফ্লাইট ধরার জন্য হুড়োহুড়ি। সুপ্রিয়র কথায়, ঠিক যেন বাসের পিছনে দৌড়। দেখেছেন বিমান থেকে ছিটকে পড়া মানুষগুলোকে। তারপর আরও বেশি করে আতঙ্ক চেপে বসে মাথায়। দেখেছেন, মা ছাড়া  দেড় বছরের ছোট্ট শিশুর কান্না। সেই বাচ্চাটিকে মার্কিন সেনা রক্ষা করে, জল-খাবার দেয়।
সুপ্রিয় দেখেছেন, এয়ারপোর্টেও তালিবান পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে। একের পর এক গুলি চালাচ্ছে জঙ্গিরা। কিন্তু কেন? ত্রাসের রাজত্ব থেকে সদ্য দেশে ফেরা যুবকের দাবি, সবাই দেশ ছেড়ে গেলে কার উপর শাসন চালাবে তালিবান, এই ভেবেই ওরা চালাত গুলি। বললেন, প্রাণে বাঁচতে মানুষ হুড়মুড়িয়ে ন্যাটো ক্যাম্পেও ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। প্রবল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তখন ন্যাটোও গুলি চালায়। 
এই ভয়ের পরিবেশ থেকে অবশেষে বেরিয়ে আসতে পারেন তিনি। কাতার হয়ে আপাতত তিনি ফিরেছেন নিজের ভিটে নদিয়ায়।