রাজীব চৌধুরী ও বিটন চক্রবর্তী, মুর্শিদাবাদ: এবার দলীয় পদ পাইয়ে দিতেও টাকা! দলের পদ দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। কাঠগড়ায় বড়ঞার তৃণমূল- (TMC) বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সোশ্যাল মিডিয়ায় (Social Media) ভাইরাল হওয়া একটি অডিও ক্লিপিং নিয়ে চূড়ান্ত জল্পনা শুরু হয়েছে। বিধায়কের দাবি কথা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু সেটা অন্য বিষয়ে।
দলীয় পদ পাইয়ে দিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠল, বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে। কথোপকথনের কথা স্বীকার করে, বিধায়কের দাবি, কথা হয়েছিল অন্য বিষয়ে। অন্যদিকে, ব্লক যুব সভাপতি করার জন্য দশ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন ব্লক যুব সভাপতি। আমি অনেককেই সই করা প্যাড দিয়ে ছিলাম। সেখান থেকেই এটা করা হয়েছে কিনা দেখছি, প্রতিক্রিয়া জীবনকৃষ্ণ সাহার।
কখনও মুর্শিদাবাদ, কখনও পূর্ব মেদিনীপুর। কোথাও দলীয় পদ দেওয়ার জন্য ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। কখনও সরকারি কাজ করার জন্য কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। দুটি জেলার ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের দিকে। অভিযোগ করাও হয়েছে দলের মধ্য থেকে। অভিযোগকারী দলেরই নেতা-কর্মী। সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি অডিয়ো ক্লিপ। ফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ঘিরে শুরুই শোরগোল। যা ঘিরে মুর্শিদাবাদ জেলার রাজনীতি তোলপাড়। যদিও সেই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ।
কী শোনা গিয়েছে অডিও ক্লিপে:
জীবনকৃষ্ণ সাহা: না..আমি হবিবুরকে যেটা বলতে বলেছিলাম, আপনাকে বলতে বলেছিলাম। চাচার মুখ থেকে শুনে নিও কীরকম কী খরচ করবে? সে জায়গা থেকে, নেগেটিভ জায়গা আছে একটা। সেই জায়গাটাকে আমাকে আটকাতে হবে।
গোলাম মুর্শেদ: সে অবশ্যই আটকাবা।
জীবনকৃষ্ণ সাহা: সেটা আমার দায়িত্ব।
গোলাম মুর্শেদ: বলো...সেটা কত কী?
জীবনকৃষ্ণ সাহা: আমি দেখুন, আপনাকে বলেছিলাম। মোটামুটি ধরুন আমাকে এই মুহুর্তে আপনাকে দিতে হবে, পরে যা দেবেন দেবেন, এই মুহূর্তে আপনাকে ৩০ লাখ দেবেন।
গোলাম মুর্শেদ: না... এ সম্ভব গো?
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ:
মুর্শিদাবাদের বড়ঞার প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি গোলাম মুর্শেদের দাবি, ফোনে যে দু’জনের গলা শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে একটি তাঁর। আরেকটি বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, এই কথোপকথনে তাঁকে ব্লক সভাপতি করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। কথোপকথনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিধায়ক। তবে তাঁর দাবি, কথা হয়েছিল অন্য বিষয়ে। বড়ঞার তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি গোলাম মুর্শেদ বলেন, 'জীবনকৃষ্ণ টাকা চান ব্লক সভাপতি করার জন্য ৩০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন।' পাল্টা বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা বলেন, 'আমারই গলা। অন্য বিষয়ে কথা হয়েছিল।'
আরও অভিযোগ:
এই অডিও ভাইরাল হওয়ার পর, ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন, বড়ঞা ব্লকের প্রাক্তন যুব তৃণমূল সভাপতি ও বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মাহে আলম। যেখানে তাঁর অভিযোগ, ব্লক যুব সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে, ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে, একজনকে সেই পদে বসান তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। সেকথা বলতে গিয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়েন তৃণমূল নেতা মাহে আলম।
বিধায়কের দাবি:
বড়ঞা তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা বলেন, 'আমি অনেককেই সই করা প্যাড দিয়ে ছিলাম। সেখান থেকেই এটা করা হয়েছে কিনা দেখছি।'
অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে পূর্ব মেদিনীপুরেও (Purba Medinipur) এমন অভিযোগ উঠেছে। মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ তুলতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলেরই মহিষাদল অঞ্চল সভাপতিকে। ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি এবিপি আনন্দ। ওই ভিডিওতে তৃণমূল নাটশাল ২ নম্বর অঞ্চল সভাপতি কমলাকান্ত মণ্ডল বলছেন, 'যা শুনলেন এগুলো সব সত্য কথা। কোনও ভুল আপনি শোনেননি। আমাদের অঞ্চলে মোট যা চুরি করে তার ৪ ভাগ করে সব পার্ট পার্ট ভাগ করে নেয়। ' এই বক্তব্য যে তাঁর, সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি। তিনি বলেন, 'হ্যাঁ আমি ওটা বলেছি। আমাদের অঞ্চলের কাটমানি ৪ ভাগ হয়। ২ জন আমাদের প্রধানের সঙ্গে থাকে,... আমাদের যে অফিসের অফিসার উনি একটা নেন, আরেকটা আমাদের বিধায়কের কাছ পর্যন্ত যায়।'
মহিষাদলের বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, 'বিজেপির চক্রান্ত। উনি অনেকদিনই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।উনি বিধানসভার সময় বিজেপি চক্রান্ত করে এইসব করছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি প্রমান দিক তথ্য দিক।'