দীপক ঘোষ, শিবাশিস মৌলিক, কৃষ্ণেন্দু অধিকারী,কলকাতা : 'পাড়ায় সমাধান' কর্মসূচির ধাঁচেই এবার, 'আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান'। ২ অগস্ট থেকে, রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে তৃণমূল সরকারের নতুন কর্মসূচি। যেখানে মোট খরচের পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। ২১ সালে, বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে, যেমন 'পাড়ায় সমাধান' কর্মসূচি শুরু করেছিল সরকার, ঠিক একই ধাঁচে এবার বুথভিত্তিক কর্মসূচি যেখানে, স্থানীয় ছোট ছোট সমস্য়ার কথা জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষ। চটজলদি সেই সমস্য়া সমাধানের চেষ্টা করবেন সরকারি কর্মীরা!
তৃণমূলের দাবি, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মাস্টারস্ট্রোক! পাল্টা বিজেপির দাবি, এই প্রকল্পে আসলে তৃণমূলের দুর্নীতির নতুন মাধ্যম। তৃণমূলের দাবি, সরকারি পরিষেবাকে কার্যত মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার, তৃণমূল সরকারের এই মডেল নজিরবিহীন! পাল্টা বিজেপির দাবি, পুরোটাই আসলে আসন্ন বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে সরকারি টাকায় তৃণমূলের প্রচার । সরকারি প্রকল্প ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর-বাগযুদ্ধ-ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ এ রাজ্যে নতুন নয়।
২ অগাস্ট থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে 'আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান' কর্মসূচি। ভোটের মুখে এই প্রকল্প, তাই শাসক যেমন কৃতিত্ব নিতে মরিয়া, তেমনই বিরোধীরাও কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগে থেকেই রণংদেহী। যে তৃণমূল সরকার সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেছিল, DA-র বকেয়া টাকা দিতে গেলে তাদের কোমর ভেঙে যাবে, তারাই ভোটের আগে শুরু করল 'নতুন প্রজেক্ট'। এবছর দু্র্গাপুজোর জন্য় ক্লাবগুলির অনুদান বেড়ে হচ্ছে ১ লক্ষ টাকা। এর বেলা এত টাকা আসছে কোথা থেকে, তা নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে বিরোধীরা।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোটের মুখে এই সরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে আরও বেশি করে বুথগুলিকে টার্গেট করতে চাইছে তৃণমূল? 'বুথ যার ভোট তার' রাজনৈতিক মহলে এই কথা অত্যন্ত প্রচলিত। যে দলের বুথ সংগঠন শক্তিশালী, তারা ভোটে অ্যাডভান্টেজ পায়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এমনটাই বলে থাকেন। তাই কি সরকারি প্রকল্পের মধ্য়ে দিয়ে বুথগুলি দুর্ভেদ্য় করতে চাইছে তৃণমূল? বিজেপি কি আদৌ রাজ্য়ের সব বুথে শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে পেরেছে? তাই কি বিজেপির দুর্বল জায়গায় আঘাত হানার চেষ্টা করছে তৃণমূল? বিজেপি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে,৮০ হাজার বুথের মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার বুথে তাঁদের কমিটি গড়ার মতো পরিবেশ নেই। এরপরই বাকি ৬৩ হাজার বুথে ঝাপিয়ে পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সূত্রের দাবি, এর মধ্যেও মাত্র ৫০ শতাংশ বুথে অর্থাৎ ৩০ হাজারের মতো বুথে কমিটি গড়তে পেরেছে বিজেপি। বিজেপির এই দুর্বলতার কথা মাথায় রেখেই কি সরকারি প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে বুথ লেভেলে নিজেদের সংগঠনকে আরও পোক্ত করতে চাইছে তৃণমূল?