কলকাতা: হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান দেখেই বড় হয়েছেন। কোনও রকম বিভাজনের নীতিতে বিশ্বাসী নন। তার জন্যই সাম্প্রদায়িক শক্তি তাঁকে হেনস্থা করছে, বিশ্বভারতীর সঙ্গে জমি বিবাদকে এই মর্মেই ব্যাখ্যা করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (Amartya Sen)। তবে বাংলায় ক্ষমতাসীন তৃণমূলকে (TMC) সেই গোত্রে ফেললেন না অমর্ত্য। জানালেন, বেশ কিছু দলের মতো তৃণমূলও যে হিন্দু-মুসলিম (Hindu Muslim Unity)ঐক্যের পক্ষে, তা দেখে ভাল ভাল লেগেছে তাঁর। 


সাম্প্রদায়িক শক্তি তাঁকে হেনস্থা করছে, দাবি অমর্ত্যর


জমি বিতর্কে ক'দিন ধরেই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছিল বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এমনকি বিতর্ক এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, নোবেলজয়ীর নোবেল পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্য়ুৎ চক্রবর্তী।  এই পরিস্থিতিতে সোমবার শান্তিনিকেতনে অমর্ত্যর বাড়ি 'প্রতীচী'তে গিয়ে জমির কাগজ পত্র তুলে দেন মমতা।


মমতা কাগজ দিয়ে এলেও, বিতর্ক এখানে মিটবে না বলে মনে করছেন অমর্ত্য। আর তার কারণ রাজনীতি বলেই মনে করছেন তিনি। অমর্ত্য জানিয়েছেন, পার্থক্য তো রয়েইছে। রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজি এবং নেহরু যেমন করতেন, তিনি নিজেও  অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি পছন্দ করেন তিনি। হিন্দু-মুসলিমে কোনও পার্থক্য করেন না। শান্তিকেতনের পাশাপাশি ঢাকাতেও বড় হয়েছেন। বরাবর হিন্দু-মুসলিমদের কাছাকাছিই থাকতে দেখেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে সুহূদ্যতাও ছিল। তাই যাঁরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেন, তাঁদের কাছে এই ব্যবস্থা বাঞ্ছনীয় নয়। তাঁদেরই হয়ত এ ব্যাপারে ইচ্ছা থাকতে পারে। 


আরও পড়ুন: Amartya Sen: ‘ভারতরত্ন হোক বা নোবেল, কোনও লোভ নেই, যা খুশি বলতে পারেন’, জানিয়ে দিলেন অমর্ত্য


মমতার কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বটে, কিন্তু বিশ্বভারতীকে নিয়ে তাঁর দুঃখের কারণ রয়েছে বলে জানান অমর্ত্য। তাঁর কথায়, "আমি শান্তিনিকেতনের ছাত্র। এখানে বড় হয়েছি। এখানে হিন্দু-মুসলিমের বিবাদ থাকাটা আমার কাছে অত্যন্ত খেলো জিনিস। সেটার প্রকাশ যদি এখানে ঘটে, আমার দুঃখের কারণ রয়েছে। "


মমতা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সপক্ষে যে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেছেন, তা ভাল লেগেছে বলে জানান অমর্ত্য। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রী হিন্দু-মুসলিম ঐক্য নিয়ে যে স্পষ্ট ধারণা প্রকাশ করলেন, তা আমার ভাল লাগল। তৃণমূলই একমাত্রা দল নয়, যারা এটা ভাবে। তবে তারা এটা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবছে, তার পরিচয় পেলে ভাললাগার কারণ সত্যিই রয়েছে।"


বিশ্বভারতীকে নিয়ে তাঁর দুঃখের কারণ রয়েছে, জানান অমর্ত্য


এর আগে, মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য বলো শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন অমর্ত্য। তা অস্বীকার করেননি তিনি। তবে তাঁর দাবি, একমাত্র মমতাই যোগ্য , সেকথা বলিনি আমি। তবে যোগ্যতা রয়েছে ওঁর মধ্যে। অন্য রাজনৈতিক দলও রয়েছে। তারাও চেষ্টা করুক। অসমাপ্রদায়িক রাজনীতির চর্চা করুন। এটা আমার ইচ্ছা এবং সেটা হবে বলেই আশাকরি। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে চাননি অমর্ত্য। তবে সাম্প্রদায়িকতা বিসর্জন দেওয়ার পক্ষপাতী তিনি। তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথ, গাঁধী, নেহরুদের সময় হিন্দু-মুসলিম ঐক্য নিয়ে যে জ্ঞান তৈরি হয়েছিল, সেটির মূল্য তাঁর কাছে অনেক। তা যত দিন চালু থাকবে, দেশ ততই লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন।