কলকাতা: বিধানসভা উপনির্বাচনের প্রচারে এসে ফের পরিবর্তনের ডাক দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের ডাক দিলেন তিনি। তাঁর দাবি, পরিবর্তন হলেই বাংলায় অনুপ্রবেশের সমস্যা মিটবে। শান্তি ফিরবে বাংলায়। বাংলার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বদ্ধপরিকর বলেও দাবি করেন তিনি। কেন্দ্রের পাঠানো টাকায় বাংলায় দুর্নীতি হয় বলেও অভিযোগ তুললেন। (Amit Shah)


রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হতে চলেছে, তার আগে শনিবারই রাজ্যে এসে পৌঁছন শাহ। রবিবার তিনি পেট্রাপোল সীমান্তে বিএসএফ-এর অনুষ্ঠানে অংশ নেন, সেখানে মৈত্রী দ্বার উদ্বোধন করেন। আর সেখান থেকেই পরিবর্তনের ডাক দেন। শাহ বলেন, "আজ বাংলার মানুষকে বলে যাচ্ছি, '২৬-এ পরিবর্তন করে দিন। অনুপ্রবেশকারীদের পুরোপুরি রুখে তবে ছাড়ব। অনুপ্রবেশ বন্ধ হলেই শান্তি ফিরবে বাংলায়। বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, মায়ানমারের মতো দেশের সঙ্গে সংস্কৃতি, ভাষাগত আদানপ্রদান বাড়বে। পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন যুগ শুরু হবে।" (BJP in West Bengal)


রাজ্যের তৃণমূল সরকার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যে বঞ্চনার অভিযোগ তোলে, তা নিয়েও এদিন আক্রমণ শানান শাহ। তাঁর কথায়, "মমতাদি I.N.D.I জোটের সদস্য। মন্ত্রীও ছিলেন, আপনাদের মন্ত্রীও কেন্দ্রে ছিলেন। ১০ বছরে বাংলার জন্য কী করেছেন? জবাব দেন না। আমি জবাব এনেছি। UPA বাংলাকে ১০ বছরে শুধুমাত্র ২ লক্ষ ৯০০০ কোটি টাকা দিয়েছিল। আর ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি সরকার বাংলাকে ৭ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু মোদিজি যে টাকা পাঠান, তা দুর্নীতির বলি হয়।"


শাহ এদিন আরও বলেন, "আমি আপনাদের ভরসা দিচ্ছি, আপনাদের অচ্ছে দিন আসতে আর বেশি দিন নেই। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগণনার সঙ্গেই এখানে অচ্ছে দিন শুরু হবে। মমতাদি সারাক্ষণ বলেন, ১০০ দিনের কাজে অন্যায় হচ্ছে। UPA আমলে ১৫০০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। NDA ৫৪ হাজার কোটি দিয়েছে। আমি জানতে চাই, এই ৫৪ হাজার কোটি ১০০ দিনের কর্মীদের কাছে পৌঁছয় না কি, তৃণমূল কর্মীদের পকেটে ঢোকে, তদন্ত করে দেখুন।"


শাহের দাবি, গ্রাম সড়ক আবাস যোজনায় UPA ৫৪০০ কোটি দিয়েছিল, NDA ১৭০০ কোটি দিয়েছে। আবাস যোজনায় UPA ৪৫০০ কোটি দিয়েছিল, মোদি ৫০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন। তবে শাহ এই দাবি করলেও, বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে রাখা হয়েছে বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। সেই নিয়ে সংসদেও সরব হয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শ্বেতপত্র প্রকাশের চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন কেন্দ্রকে।


যদিও শাহের 'অচ্ছে দিন' মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, "একবার এসে বলবেন একুশ, একবার বলবেন বাইশ, একবার বলবেন, তেইশ, একবার বলবেন চব্বিশ, একবার বলবেন পঁচিশ...ক্রমশ তো পিছোতেই থাকছে! অমিত শাহ রাজনৈতিক ব্যক্তি, তিনি কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর চেয়ারের গুরুত্ব রয়েছে বটে। কিন্তু তিনি রাজনৈতিক পর্যটক। তিনি আসেন, রাজনীতির কথা বলেন, মানুষ কোনও গুরুত্ব দেন না।"


অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে কুণালের বক্তব্য, "আর অনুপ্রবেশের কথা যদি অমিত শাহ বলেন, তাহলে সেটা আত্মঘাতী গোল। কারণ অনুপ্রবেশ সীমান্তের সমস্যা। আন্তর্জাতিক সীমান্ত পাহারা দেয় অমিত শাহের দফতরের অধীন বিএসএফ, রাজ্য বা কলকাতা পুলিশ নয়। ফলে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলেন অনুপ্রবেশ সমস্যা, তাহলে ধরে নিতে হয়, সীমান্তরক্ষায় ব্যর্থ কেন্দ্র।" বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা দেওয়া নিয়ে শাহ যে দাবি করেছেন, তাও এদিন খারিজ করে দেন কুণাল। জানান, বিজেপি-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে যে অভিযোগ রয়েছে, তার তালিকা সুদীর্ঘ। ইচ্ছাকৃত ভাবে বাংলাকে পাওনা টাকা দেওয়া হচ্ছে না। কুণালের দাবি, ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া টাকা কেন্দ্র বাংলাকে দিচ্ছে না। মুখে কথা না বলে শাহ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক বলেও দাবি জানান কুণাল।