কৃষ্ণেনদু অধিকারী: তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra) থেকে তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় (Shatabdi Roy)। সুপারিশ করেও সরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করাতে না পেরে, সম্প্রতি বার বার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। পাঁচটা হাসপাতাল ঘুরেও, চিকিৎসা না পেয়ে, মন্তেশ্বরের সুজিত বর্মনের মৃত্য়ু খবরে, তাঁদের কারও গলায় হতাশা ঝরে পড়েছে। কেউ কড়া ব্য়বস্থার সওয়াল করেছেন (Government Hospitals)।


গ্রিক চিন্তাবিদ প্লেটো তাঁর 'The Republic' বইয়ে লিখেছিলেন, 'দার্শনিক রাজা যে রাষ্ট্রের সৃষ্টি করবেন সেখানে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য থাকবে না। প্রজাদের মঙ্গলার্থে রাজাকে সহনশীল হতে হয়। প্রতিটি ব্যক্তির যা প্রাপ্য তাকে তাই দিতে হবে'। কিন্তু, এখনকার যুগের প্রশাসকরা কি একথা কোনও দিন কানে তোলেন?


পাঁচ-পাঁচটা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরেও, কোনও চিকিৎসা না পেয়ে, মৃত্য়ু হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের সুজিত বর্মনের। এই মর্মান্তিক পরিণতি দেখে, অনেকের গলাতেই আক্ষেপ ঝরে পড়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ বলেই কি এই হয়রানি? এই অসহায় মৃত্য়ু?

গত কয়েকদিনে তৃণমূলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের তরফে সুুপারিশ সত্ত্বেও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো যায়নি। তা-ও আবার যেমন তেমন নেতা নন, কেউ তৃণমূলের বিধায়ক, কেউ আবার সাংসদ। সুজিতের মৃত্য়ুর খবর তাঁদের মনকে স্বভাবতই ভারাক্রান্ত করে তুলেছে।


আরও পড়ুন: Enforcement Directorate : অনুব্রত, সুকন্যা ও ছবি মণ্ডলের নামে থাকা যাবতীয় সম্পত্তি ও টাকা অ্যাটাচ করল ইডি


কয়েকদিন আগে দুর্ঘটনায় আহত এক তরুণকে হাসপাতালে ভর্তি করা নিয়ে, SSKM-এর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন মদন। যে হাসপাতালে একসময়ে তাঁর দাপটে কার্যত বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, সেখানে শেষমেশ ওই রোগীকে ভর্তি করাতে পারেননি তিনি, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি। CPM-এর আমল হলে এক মিনিটে রোগী ভর্তি হয়ে যেত বলে তাই মন্তব্য করেছেন তিনি।

পরে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই যুবকের মৃত্য়ু হয়। এর কয়েকদিনের মধ্য়েই আবার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে, অভিযোগ চিকিৎসা না পেয়ে, মৃত্য়ু হল আর একজনের। তাঁকেও SSKM-এ নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু চিকিৎসা মেলেনি বলে অভিযোগ। তাই হতাশার সুর ধরা পড়েছে মদনের গলায়। তিনি বলেন, "খুব কষ্ট হয়েছে। মানসিক ভাবে নিতে পারছি না। এবার তো অ্য়াসাইলামে চলে যেতে হবে! তারপর যা শুনছি, তা খুব দুঃখের। আমি মানসিক ভাবে ভাল নেই। মৃত্য়ু দুর্ভাগ্য়জনক। আমি পারিনি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, পিজি-র মদন মিত্র ছিলাম আমি। আজ আমি অক্ষম, ক্ষমাপ্রার্থী।"

মদন মিত্রর মতো সুপারিশ করে রোগী ভর্তি করাতে ব্য়র্থ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দীও। গুলিবিদ্ধ এক যুবকের চিকিৎসা নিয়ে রামপুরহাট হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সুরাহা করতে পারেননি তিনি। তাঁর বক্তব্য, "যদি আমার রেকমেনডেশনে গিয়েই এই অবস্থা হয়, তাহলে পাবলিকের কী হবে? এটা আমাদের উত্তর চাই। ওরা বলেছে যে হবে না। নার্সিংহোমে যান। এটা কেন? ২৪ ঘণ্টা পরে কেন? এই উত্তরটা চাই।"

ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে, সুজিতের মৃত্য়ুর খবর শোনার পর, রেফার নিয়ে কড়া ব্য়বস্থার সওয়াল করেছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী। তাঁর কথায়, "রেফার করাটা কোনও সমাধান নয়। কারণটা কী, সেটা তো জানা দরকার! ২৪ ঘণ্টা পর কেন বলছে? রামপুরহাট নিয়ে তো বলেছিলাম। কেন সাতটা হাসপাতাল ঘুরেছে, সেটা জানা দরকার। কৈফিয়ত নেওয়া শোকজ করা দরকার। কেন ঘটেছে, কী ঘটেছে, উত্তর চাই।"

শুধুমাত্র মদন বা শতাব্দী নন, সম্প্রতি সরকারি স্বাস্থ্য়ব্য়বস্থা নিয়ে ক্ষোভের সুর শোনা গেছিল ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্য়োপাধ্য়ায় থেকে মন্ত্রী অখিল গিরির গলাতেও। হাসপাতালগুলিতে দালালচক্রের ঘুঘুর বাসা ভাঙতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন আশিস। উৎস খুঁজে বার করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। অখিলকে বলতে শোনা যায়, "হেলথ ডিপার্টমেন্টের একটা দামি ওষুধ আমি নিজে দাঁড়িয়ে দেখলাম রাত ১২টার সময় রোগী ভর্তি করতে গিয়েছি। আমি নিজে গিয়েছি। একটা দামি ওষুধ। আছে হাসপাতালে। রোগীর লোককে না দিয়ে বলছে বাজার থেকে কিনে আনুন। তাহলে সেই ওষুধটা কী হবে? সরকার দিয়েছে। আমি কেন পয়সা দিয়ে কিনব? এতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।"

শাসক দলের সাংসদ, বিধায়করাই যদি এমন অসহায় হন, ডেপুটি স্পিকার থেকে মন্ত্রীই যদি সরকারি স্বাস্থ্য়ব্য়বস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন,
তাহলে সাধারণ মানুষের কী করবে? অবধারিত ভাবে উঠে আসছে এই প্রশ্ন।