আবির ইসলাম, বোলপুর : অনুব্রত মণ্ডলকে (Anubrata Mandal) সিবিআই গ্রেফতার করার দিনই ছুটিতে গেলেন চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের যে চিকিৎসক দিনকয়েক আগে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে তাঁর বাড়িতে দেখতে গিয়েছিলেন।


সেদিন সকালে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে একরকম কথা বললেও রাতের দিকে বিস্ফোরক দাবি করে তিনি জানিয়েছিলেন, সুপারের চাপে অনুব্রত মণ্ডলকে হাসপাতালের রোগী দেখা ছেড়ে দেখতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি সাদা কাগজে তাঁকে অনুব্রত মণ্ডলের জন্য বিশ্রাম লিখে দিতে বলা হয়েছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।


সেই চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী জানিয়েছিলেন, 'শারীরিক ও মানসিক ধকল গিয়েছে। কটা দিন বাড়িতে বিশ্রাম নিতে চাই। সাতদিনের ছুটি নিয়েছি। উদ্বেগ ও টেনশনে রয়েছি। পরিবারকে নিয়েও একটু চিন্তা তো রয়েইছে, তাই সাবধানে থাকতে হবে।'


কিছুদিন আগেই বীরভূম থেকে এসএসকেএমে শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। সিবিআই সনম উপেক্ষা করে কলকাতায় আসা অনুব্রতকে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার নেই বলেই জানিয়ে দিয়েছিল এসএসকেএমের ৭ চিকিৎসকের মেডিক্যাল বোর্ড। তার পরের দিনই অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে তাঁকে দেখতে যান বোলপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক চন্দ্রনাথ অধিকারী। সকালের দিনে তিনি বলেছিলেন, উদ্বেগ ও ডিপ্রেসনে থাকা অনুব্রতকে বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও সেদিন রাতেই বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন তিনি।



প্রসঙ্গত এদিন আদালতের নির্দেশনামা ও মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের পৌঁছয় সিবিআই। সিবিআই (CBI) আধিকারিকদের দাবি, গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলের যোগ মিলেছে। তাঁদের থেকে টাকাও অনুব্রত পেতেন বলেই দাবি করেছেন সিবিআইয়েক তদন্তকারী অফিসাররা। প্রসঙ্গত ইতিমধ্যে অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে (Saigal Hossain) গ্রেফতার করেছে সিবিআই। তিনি রয়েছেন হেফাজতে। তার সঙ্গে অনুব্রত-র যোগাযোগ থেকে শুরু করে সম্প্রতি দাখিল করা চার্জশিট, সবেতেই অনুব্রত মণ্ডলের নাম রেখেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।


গরুপাচার মামলায় (Cow Smuggling Case) ১০ বার অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। মাত্র একবার হাজিরা দেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। অসুস্থতার কথা বলে গতকালও হাজিরা এড়ান অনুব্রত। সিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, গতকাল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আজ ওই চিকিত্সকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে। সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত প্রভাব খাটিয়ে চিকিত্সককে দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। কার নির্দেশে ওই সরকারি চিকিত্সক বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাও জানতে চায় সিবিআই। খবর সূত্রের। 


বলেছিলেন, ''অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন বেড রেস্ট লিখে দিতে। সরকারি হাসপাতালের কোনও প্রেসক্রিপশন পাঠানো হয়নি’। সাদা কাগজে আমি অ্যাডভাইজ লিখে দি। সুপারের নির্দেশে আমি অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম অনুব্রত মণ্ডল হাসপাতালে আসুক চিকিৎসার জন্য।'' তিনি আরও বলেন, ''অনুব্রতর বাড়ি যেতে বাধ্য করেছিলেন হাসপাতালের সুপার। সুপার আমাকে নির্দেশ দেন অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে যেতে’ সাদা কাগজে লিখতে বলেছিলেন হাসপাতাল সুপার। আমার কাছে প্রেসক্রিপশনের কাগজ ছিল না। চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল আমার ওপর। সাধারণ মানুষের কাছে হেয় হয়ে গেলাম।''


আরও পড়ুন- গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই, বাড়ি থেকে বেরিয়ে কী বললেন অনুব্রত