কলকাতা: গরুপাচার মামলায় এ বার অনুব্রত মণ্ডলেরহিসাব রক্ষককে গ্রেফতার করা হল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার অনুব্রতর মুখোমুখি বসিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাঁর হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারিকে। সূত্রের খবর, অনুব্রত, তাঁর স্ত্রী, কন্যা, আত্মীয়, ঘনিষ্ঠদের নামে বিপুল সম্পত্তি, একাধিক রাইস মিল, কোটি কোটি টাকার লেনদেন, সবকিছু নিয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। 


গরুপাচারকাণ্ডে জেলবন্দি অনুব্রতর নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কোটি কোটি টাকার হদিশ মিলেছে বলে দাবি তদন্তকারীদের। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকার উৎস কী? এগুলো কি গরু পাচারের টাকা? তার উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা। বাংলা থেকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেখানে এ দিন অনুব্রতর মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয় মণীশকে। বুধবার ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করবে অনুব্রতর কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকে। 


মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সমস্ত নথিপত্র নিয়ে দিল্লিতে ইডির সদর দফতরে হাজিরা দেন চাটার্ড অ্য়াকাউন্ট্য়ান্ট মণীশ। ইডি সূত্রে খবর, ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন মণীশ। জবাব এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। প্রশ্নের সদুত্তর দেননি। তাতেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। মোট ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে ইডি-র। প্রথমেই মণীশকে সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হল। ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে, বুধবারই আদালতে তোলা হতে পারে তাঁকে।


এ দিকে, মঙ্গলবার রামমোহন লোহিয়া হাসপতালে স্বাস্থ্য়পরীক্ষার পর, ED দফতরে নিয়ে যাওয়া হয় অনুব্রতকেও। ED সূত্রে খবর, প্রথম একঘণ্টা তাঁকে একাকী এবং পরে মণীশের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।  জানতে চাওয়া হয়, কী ভাবে রকেট গতিতে অনুব্রতর সম্পত্তির উত্থান?তাঁর এত সম্পত্তি হল কী ভাবে? সুকন্যা মণ্ডলের নামে কোটি কোটি টাকার যে ফিক্সড ডিপোজিট, এর উৎস কী? রাইস মিলের সম্পত্তির নেপথ্য়ে কী রহস্য়? অনুব্রত-জায়া ছবি মণ্ডলের নামে যে সম্পত্তি কেনা হয়েছিল, সেই টাকা কোথা থেকে এসেছিল? নামে-বেনামে এতগুলো ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্ট, এর মাধ্য়মে কি কালো টাকা সাদা করা হত? এই ভুয়ো অ্য়াকাউন্ট খোলার ভাবনা আসলে কার মস্তিষ্কপ্রসূত? 


সূত্রের খবর, অনুব্রতর হিসাবরক্ষকের কাছে এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তদন্তকারীরা। ED সূত্রে দাবি, এর আগে, জেরার মুখে অনুব্রত বার বার দাবি করেন, হিসেবপত্রের বিষয়ে যা কিছু দেখার, দেখতেন মণীশ। ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্টের ব্য়াপারেও তিনি কিছু জানতেন না।  জিজ্ঞাসাবাদে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্য়া মণ্ডলও দাবি করেন, তাঁর বাবার সমস্ত হিসেব নিকেশ দেখেন মণীশ। তবে কি মণীশ কোনও তথ্য় গোপন করছেন? নাকি দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন অনুব্রত? দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে মঙ্গলবার তারই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। 


এর আগে, গত বছর নভেম্বরে মণীশ কোঠারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি। ইডি সূত্রে খবর, বুধবার, অনুব্রতর মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাঁর মেয়ে সুকন্য়াকেও। প্রয়োজন পড়লে, অনুব্রত, তাঁর কন্য়া সুকন্য়া ও হিসেব রক্ষক মণীশ কোঠারি তিন জনকে একসঙ্গে বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।