Arjun Singh Joins TMC: গেরুয়া অধ্যায়ে ইতি, বিজেপি-তে ৩৮ মাস কাটিয়ে তৃণমূলে 'ঘরওয়াপসি' অর্জুনের

Arjun Singh Update: অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন অর্জুনের।

Continues below advertisement

কলকাতা: জন্মলগ্ন থেকেই সেনাপতির ভূমিকায় ছিলেন তিনি। মাঝখানে মতান্তর, বিচ্ছেদ, কটাক্ষ বিনিময়। কিন্তু সিনেমার মতোই শেষদৃশ্যে মিটমাট। আক্ষরিক অর্থেই বাংলার রাজনীতিতে বৃত্ত সম্পূর্ণ হল অর্জুন সিংহের (Arjun Singh)। তিনি বিজেপি (BJP) ছাড়ছিলেন বলে শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। পত্রপাঠ যাবতীয় জল্পনা খারিজ করে দেওয়ার বদলে, মাঝেমধ্য়ে তা উস্কে দেওয়ার কাজই করে এসেছেন তিনি। শেষ মেশ রবিবারের বারবেলায় তৃণমূলে (TMC) প্রত্যাবর্তন ঘটল ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুনের। পদ্মশিবিরে তিন বছর দু'মাস আট দিনের সংসারের পাট চুকিয়ে, পুরনো সংসারেই ফিরলেন তিনি। দলের ভাবী 'উত্তরসূরি' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দলে ফেরালেন পুরনো সৈনিককে। 

Continues below advertisement

তৃণমূলে ফিরলেন অর্জুন

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুরে থেকে টিকিট পাওয়া নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতান্তর দেখা দেয় অর্জুনের। জন্মলগ্ন থেকে যে দলের সঙ্গে যুক্ত, যে দলের জন্য 'বাহুবলী' ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া তাঁর, তাদের কাছ থেকে 'প্রাপ্য' সম্মান না পেয়ে কার্যতই আঁতে ঘা লাগে অর্জুনের। তাই কোও রকম সাধাসাধিতে না গিয়ে বিজেপি-তে গিয়ে ওঠেন। গেরুয়া দাপটের জোর তো ছিলই, নিজের প্রতাপও কিছু কম ছিল না অর্জুনের। ফলে একরকম হেসেখেলেই ব্যারাকপুর থেকে জয়ী হন তিনি। 

কিন্তু যে প্রতাপের জন্য এক সময় তাঁকে লুফে নিয়েছিল বিজেপি, সেখানে সমাদর তো দূর, দিল্লির অঙ্গুলিহেলন ছাড়া একচুল নড়ারও অনুমতিও পাননি বলে অভিযোগ। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একসময় তৃণমূলের হয়ে ভোটের ময়দানে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যেত যে অর্জুনকে, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথ, দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেননদের পাশে পার্শ্বচরিত্র হিসেবেও মুখ দেখানোর সুযোগ পাননি তিনি। বরং তৃণমূল থেকে শুভেন্দু অধিকারী পদ্মশিবিরে গিয়ে যেটুকু হাঁকডাক করতে পেরেছেন, তার সিকিভাগও করতে পারেননি অর্জুন। 

আরও পড়ুন: Arjun Singh: ঝড়ের কাছে নোঙর করার সাধ, তৃণমূলে ফিরছেন অর্জুন! জল্পনা উস্কে দিলেন নিজেই

তাতেই বিজেপি-র প্রতি অর্জুন বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন হলে দাবি তাঁর ঘনিষ্ঠদের। সম্প্রতি কাঁচা পাটের দামের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধেই গ্রজে উঠতে দেখা দেয় অর্জুনকে। নিজে একসময় চটকলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাই সেখানকার কর্মী-শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশা বোঝার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে বলে জানান অর্জুন। তাঁদের অধিকার আদায় করে নিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতেও পিছপা হবেন না বলে ঘোষণা করে দেন অর্জুন। সেই থেকেই তাঁর মতিগতি ভাল ঠেকছিল না বিজেপি নেতৃত্বের। তাই দিল্লিতে ডাকও পড়ে তাঁর। এমনকি পাটের ঊর্ধ্বসীমাও প্রত্যাহার করে নেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। 

কিন্তু তার পরেও মন গলেনি অর্জুনের। বরং বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে দল চলায়, তিনি ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার হয়ে রয়েছেন বলে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেন অর্জুন। ভোটের আগে দলভারী করতে তৃণমূল থেকে দলে দলে বিজেপি-তে যোগদান করানো হলেও, তৃণমূল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের বিজেপি-তে সম্মান-সম্ভ্রম নেই বলে অভিযোগ করেন। তাতেই বিজেপি-তে অর্জুনের মোহভঙ্গ এবং তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়ে ওঠে। অর্জুনও জানান, রাজনীতিতে সবকিছুই সম্ভব। এমনকি আত্ম অহঙ্কারে মগ্ন কারও সামনে মাথানত করে থাকার চেয়ে, ঝড়ের মুখে নোঙর করা ঢের ভাল বলে শনিবার রাতেই টুইটারে লেখেন তিনি। 

দীর্ঘ জল্পনার অবসান

তার পরই, রবিবার সকালে কলকাতায় আগমন অর্জুনের। তাজ হোটেলে বসে ক্যামাক স্ট্রিটে যাওয়ার নির্দেশের অপেক্ষা করতে থাকেন। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ঝালিয়ে নিতে শুরু করেন পুরনো সম্পর্কও। জানিয়ে দেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই, সবকিছুই সম্ভব। কে, কী বলল তাতে যায় আসে না, জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলে ছিলেন, তাই মমতাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়ে দেন অর্জুন। তার পরই বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ তাজ থেকে বেরোন অর্জুন। তৃণমূলের পতাকা লাগানো গাড়ি নিয়ে রওনা দেন অভিষেকের অফিসে। সেখানেই পুনরায় জোড়াফুলে যোগদান করেন। 

Continues below advertisement
Sponsored Links by Taboola