কলকাতা: বিজেপি-তে তিন বছর দু'মাসের সংসারের পাট চুকেছে। সব জল্পনার অবসা ঘটিয়ে ফের পুরনো দল তৃণমূলেই ফিরে এলেন অর্জুন সিংহ। কিন্তু সাবেক দলে ফিরলেও, এখনই ব্যারাকপুরের সাংসদ পদ ছাড়ছেন না তিনি। তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে যাওয়া দুই সাংসদ যত ক্ষণ পর্যন্ত না ইস্তফা দিচ্ছেন, তিনিও পদ ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন অর্জুন। নির্দিষ্ট করে কারও নাম নেননি তিনি। তবে এতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, অর্জুন যাঁদের দিকে ইঙ্গিত করছেন, তাঁদের হাতে পদ্ম-পতাকা তুলে দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই তাঁর। দু'জনের কেউই নির্দিষ্ট করে কারও নাম উল্লেখ না করলেও, পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংসদের দিকেই ইঙ্গিত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।


তৃণমূলে ফিরলেন অর্জুন


রবিবারের বারবেলায় তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন অর্জুন। প্রথমে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সমন্বয় বৈঠকে যোগ দেন তিনি। তার পর যোগ দেন তৃণমূলে। ক্য়ামাক স্ট্রিটেই সাংবাদিক বৈঠক করেন অর্জুন। সেখানেই সাংসদ পদদ না ছাড়ার কথা জানান তিবি। অর্জুন বলেন, "আমার সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়া উচিত। কিন্তু ২ তৃণমূল সাংসদ বিজেপিতে গিয়ে এখনও ইস্তফা দেননি। তাঁরা ইস্তফা দিলে একঘণ্টার মধ্যে ইস্তফা দেব।"


ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন। ওই কেন্দ্র থেকে টিকিট পাওয়া নিয়ে মতান্তরের জেরেই ২০১৯ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন। তার পর সেখান থেকে বিজয়ীও হন। কিন্তু সম্প্রতি বিজেপি-তে থেকেই 'বেসুরো' বাজতে শুরু করেন অর্জুন। পাটের দাম নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তার পর দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর মান ভাঙানোর চেষ্টা করলেও, মন ভেজেনি অর্জুনের। বরং তৃণমূলে ফেরার জল্পনা উস্কে দেন তিনি।  


আরও পড়ুন: Arjun Singh: খোলা হল বিজেপির পতাকা, অর্জুনের বাড়িতে লাগানো হল জোড়াফুল পতাকা। Bangla News


 বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অঙ্গুলিহেলনে দল চলায়, তিনি ঢাল নেই, তরোয়াল নেই, নিধিরাম সর্দার হয়ে রয়েছেন বলে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করেন অর্জুন। ভোটের আগে দলভারী করতে তৃণমূল থেকে দলে দলে বিজেপি-তে যোগদান করানো হলেও, তৃণমূল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের বিজেপি-তে সম্মান-সম্ভ্রম নেই বলে অভিযোগ করেন। তাতেই বিজেপি-তে অর্জুনের মোহভঙ্গ এবং তৃণমূলে যোগদানের সম্ভাবনা আরও জোরাল হয়ে ওঠে। অর্জুনও জানান, রাজনীতিতে সবকিছুই সম্ভব। এমনকি আত্ম অহঙ্কারে মগ্ন কারও সামনে মাথানত করে থাকার চেয়ে, ঝড়ের মুখে নোঙর করা ঢের ভাল বলে শনিবার রাতেই টুইটারে লেখেন তিনি।


বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন অর্জুন


এর পর রবিবার সকালে কলকাতায় আগমন অর্জুনের। তাজ হোটেলে বসে ক্যামাক স্ট্রিটে যাওয়ার নির্দেশের অপেক্ষা করতে থাকেন। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ঝালিয়ে নিতে শুরু করেন পুরনো সম্পর্কও। জানিয়ে দেন, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই, সবকিছুই সম্ভব। কে, কী বলল তাতে যায় আসে না, জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলে ছিলেন, তাই মমতাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলেও জানিয়ে দেন অর্জুন। তার পরই বিকেল সওয়া ৪টে নাগাদ তাজ থেকে বেরোন অর্জুন। তৃণমূলের পতাকা লাগানো গাড়ি নিয়ে রওনা দেন অভিষেকের অফিসে। সেখানেই পুনরায় জোড়াফুলে যোগদান করেন।