কলকাতা: পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যেই দলীয় কোন্দল চলে এসেছিল বাইরে। তা নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। প্রকাশ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করা যাবে না বলে সাফ নির্দেশ ছিল তৃণমূল নেত্রীর (TMC)। দলের শৃঙ্খলারক্ষা নিয়ে কড়া নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের (Panchayat Electections 2023) আগে সেই নির্দেশ কার্যতই খাটছে না দলের দুই হেভিওয়েট নেতার ক্ষেত্রে। বরং মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্যে প্রকাশ্যেই তরজায় জড়িয়ে পড়লেন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) এবং মদন মিত্র (Madan Mitra)। তাতেই তৃণমূলে শৃঙ্খলার রাশ আলগা হচ্ছে কিনা, উঠছে প্রশ্ন।
তৃণমূলে শৃঙ্খলার রাশ আলগা হচ্ছে কি, উঠছে প্রশ্ন
এক দিকে, রাজ্যের পুরমন্ত্রী, কলকাতার মেয়র এবং তৃণমূলের অন্যতম হেভিওয়েট নেতা ফিরহাদ। অন্য দিকে, মমতার আদি সৈনিক, একদা মন্ত্রী তথা কামারহাটির বিধায়ক মদন। তাঁদের বাদানুবাদ ঘিরেই এই মুহূর্তে সরগরম বাংলার রাজনীতি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সম্প্রতি রাজ্যের একাধিক জায়গা থেকে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, বোমা উদ্ধারের ঘটনা সামনে এসেছে। তা নিয়েই সম্প্রতি বিতর্কিত মন্তব্য করেন মদন। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রে দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণের কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে।
মদনের বক্তব্য ছিল, "আমাদের কাছে ভাল ট্রেনার আছে, প্রশিক্ষণ নেবে কর্মীরা। কোথায় কোথায় অস্ত্র পৌঁছচ্ছে জানলে সুবিধা হয়। আমাদের কাছে প্রাক্তন সেনাকর্মীরা আছে, তারাই শেখাবে। কীভাবে লক খুলতে হয়, ল্যাচ কি লাগাতে হয়, শিখবে তৃণমূলকর্মীরা।" শুধু তাই নয়, যাতায়াতের পথে কিছু ঘটে যেতে পারে বলে সম্প্রতি বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা গিয়েছিল মদনকে।
আরও পড়ুন: Suvendu Adhikari: ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে একাধিক দুর্নীতি, আদালতে সরব শুভেন্দু
পরে এ নিয়ে সাফাই দিলেও, সমালোচনার মুখে পড়েন মদন। সেই আবহেই প্রকাশ্যে মদনকে তীব্র কটাক্ষ করেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, মদন মিত্র বলছেন ট্রেনিং দেবেন, মদন মিত্র কে, ট্রেনিং দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি পঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন না। তিনি রাজ্যের মন্ত্রিসভার নন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি। ও যেটা বলছে, সেটাই আমাদের পার্টির বক্তব্য। আমরা চাই ১০০% শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। পার্টি থেকে যেটা বলা হয়, সেটাই পার্টির সৈনিক হিসাবে আমাদের সবার মানা উচিত।"
গোড়ার দিকে নিজের ভঙ্গিতেই ফিরহাদের এই মন্তব্যের জবাব দেন মদন। "ববি আমার ভাইয়ের মতো। ও আমাকে পাগল বললে, ধন্য যে হয় সে পাগলামি", বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু এর পরই ফিরহাদকে বিঁধতে শোনা যায় মদনকে। ফেসবুক লাইভে মদন বলেন, "এই যে আপনি বললেন কে মদনমিত্র? বিশ্বাস করুন, আমি এবং আমার পরিবার, আমরা ভয়ে থরথর করে কাঁপছি। কারণ আমি যখন ফিরছি, বর্ধমানের রাস্তা দিয়ে, যেকোনও মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারে...এক্ষুনি দু'টো ছেলে, দুম করে আমায় গুলি করে বলবে, ফিরহাদ হাকিম বলে দিয়েছে। কে বলেছেন? না ফিরহাদ হাকিম। এই মুহূর্তে মমতা ব্যানার্জী, অভিষেক ব্যানার্জীর পরে, সবথেকে শক্তিশালী, পরাক্রমশালী, যাঁর হুকুমে নগরপাল থেকে শুরু করে, গোটা পশ্চিমবঙ্গ চলে।"
প্রকাশ্য বাগযুদ্ধয় জড়ালেন ফিরহাদ ও মদন
শুধু সেখানেই থামেননি মদন। অভিষেকের উল্লেখ নিয়েও ফিরহাদকে কটাক্ষ করেন তিনি। বলেন, "আপনার মুখে বহুদিন বাদে অভিষেককে কোট করা আমার খুব ভাল লাগল। আপনি বহুদিন বাদে বললেন, যে অভিষেক ব্যানার্জী বলে দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। আপনি অভিষেককে কোট করায়, আমি খুব খুশি। আপনি বলেছেন, অভিষেক ব্যানার্জী যেটা বলে দিয়েছে, এটাই লাস্ট কথা। এটাই তো আমরা বলতে চাইছিলাম!"
আর তৃণমূলের দুই হেভিওয়েট নেতার এমন প্রকাশ্য বাগযুদ্ধই একাধিক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কোথাও কি দলের অন্দরে শৃঙ্খলার রাশ আলগা হচ্ছে? কেন এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছেন না মমতা-অভিষেক? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলেও।