কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, আশাবুল হোসেন ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: দলের একাংশের রোষের মুখে পড়েও, দুর্নীতি নিয়ে নিজের বক্তব্যে অনড় তৃণমূল (TMC) সাংসদ জহর সরকার (Jawhar Sircar)। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, যা ঠিক মনে করেছি, তাই বলেছি। অন্যদিকে, এদিনও তাঁকে আক্রমণ করেছেন সৌগত রায়, সুখেন্দুশেখর রায়, তাপস রায়, বিশ্বজিৎ দেব-সহ তৃণমূলের অনেকেই। 


দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলার পর থেকেই দলের নেতাদের রোষে জহর


দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলার পর থেকেই দলের নেতাদের রোষের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। তবে, তার পরও নিজের অবস্থানে অনড় তিনি। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় এবং গয়নার স্তূপ উদ্ধার নিয়ে বিরোধীরা যখন সরব, সেই সময় এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে  বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন জহর সরকার। বলেছিলেন, "যখন টিভিতে দেখলাম বিশ্বাসই করতে পারিনি। কারও বাড়ি থেকে এত টাকা বেরোতে পারে! কল্পনার অতীত। এমন দুর্নীতির দৃশ্য টিভিতে কম দেখা যায়। বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলল, রাজনীতি ছেড়ে দাও । সাংসদ পদ ছেড়ে দাও। বাড়ির লোক তো বলছে, এখুনি ছেড়ে দাও বাপু! বন্ধুরা টিপ্পনি করল।  বলল, এখনও আছিস? কত পেয়েছিস?  এমন লাঞ্ছনা জীবনে কোনওদিন শুনতে হয়নি।"


এর পর থেকে, তৃণমূলের নেতারাই, জহরের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাতে শুরু করেন। সৌগত বলেন, "সাহস থাকলে পদত্যাগ করুন!  কমপক্ষে সুবিধা ভোগটা বন্ধ হবে। উনি গেলে কোনও ক্ষতি হবে না। লাভই হবে।" বুধবারও জহর সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূলের আরও দুই নেতা। সুখেন্দুশেখর বলেন, "আমি মনে করি, যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।" বিধায়ক তাপস বলেন, "ওঁর নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে আমি লজ্জিত। এ সব বলার আগে অন্তত এক বার নেত্রীর সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল জহরবাবুর।"


জহর সরকার অবশ্য নিজের বক্তব্য থেকে সরছেন না।  এখনও নিজের অবস্থানেই অনড় তিনি। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, তৃণমূলের ভাবমূর্তির স্বার্থে তিনি যা ঠিক মনে করেছেন, তাই বলেছেন। তাঁর কাছে ২০২৪-এর যুদ্ধ সবচেয়ে বড়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি এমনই জানিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। দু'দিন আগে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তাঁর মুখে ২০২৪’এর কথা শোনা গিয়েছিল। বলেছিলেন, "তৃণমূলের প্রচুর লোক আছে যারা সৎ... আর ক'টা শ্রেণিকে দেখলে মনে হয় ধান্দাবাজ! ভাবমূর্তি ফিরে পেতে হবে। এদেরকে শরীর থেকে বর্জন না করে, পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালের লড়াই করা মুশকিল হবে।"


আরও পড়ুন: Srikanta Mahata: 'জুনের কাছে ক্ষমা চাও', ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মমতার কাছে তিরস্কৃত শ্রীকান্ত


জহরের এই অনড় অবস্থানে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়ল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাতে নয়া মাত্রা যোগ করেছেন বামফ্রন্টের (CPM) চেয়ারম্যান বিমান বসু (Biman Bose)। জহরের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ, এখন নাকি তাঁর বিবেকের দংশন হয়েছে... তৃণমূল কংগ্রেসে এলে গরু পাচার থাকবে বালি চুরি থাকবে তোলাবাজি থাকবে, সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পাবে, যাঁরা সফল তাঁরা রাস্তায় বসে থাকবেন এটাই তো তৃণমূল কংগ্রেস।"


রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বলেন, "ইস্তফা দেবেন না। রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করলেই অনুব্রতর মতো কাউকে পাঠাবে তৃণমূল। অনুব্রতর মতো কাউকে রাজ্যসভায় পাঠাতে চায় তৃণমূল। যা দেখছেন, তা ভাল করে বলুন, বাংলার মানুষ জানতে চায়।"


সৌগত রায়, সুখেন্দুশেখর রায়, তাপস রায়, বিশ্বজিৎ দেব-সহ তৃণমূলের অনেকেই আক্রমণ করেছেন জহরকে


এমন পরিস্থিতিতে বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে, দলের নেতাদের সম্পর্কে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে, সকলকে সতর্ক থাকতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দলীয় সূত্রে এমনই খবর। এখন জহর সরকারের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী অবস্থান নেন, সেদিকেই নজর তৃণমূল সাংসদের ঘনিষ্ঠ মহলের।