সুজিত মণ্ডল, রানাঘাট: রানাঘাটে গয়নার শোরুমে ডাকাতির পর, দুষ্কৃতীদের এলোপাথাড়ির গুলির মুখেও তাদের ধাওয়া করেছিলেন অকুতোভয় ASI রতন রায়। পায়ে গুলি চালিয়ে দুই দুষ্কৃতীকে ধরেও ফেলেন তিনি। সাহসের জন্য় এখন সবার কাছে বাহবা কুড়োচ্ছেন তিনি।তবে রতন রায়ের স্পষ্ট কথা, এটাই তো পুলিশের কাজ! নাহলে দুষ্কৃতীরা ভয় পাবে কেন?


গয়নার শোরুমে ডাকাতি করে, গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। পাল্টা গুলি ছুড়তে ছুড়তে তাদের পিছু ধাওয়া করছেন এক পুলিশকর্মী।রুপোলি পর্দায় এমন দৃশ্য় বিরল নয়। কিন্তু, মঙ্গলবার রাণাঘাটের ডাকাতির পর, বাস্তবেই হাড় হিম করা এই দৃশ্য় দেখেছেন আপামর বঙ্গবাসী। আর এই ছবি সামনে আসার পর থেকে যাবতীয় চর্চার কেন্দ্রে একজনই, তিনি রতন রায়।রানাঘাট থানার অ্য়াসিস্টান্ট সাব ইন্সপেক্টর।যিনি মঙ্গলবার দুষ্কৃতীদের গুলির মুখেও, অকুতোভয় হয়ে একা তাদের ধাওয়া করেন। তারপর পায়ে গুলি চালিয়ে, দুজনকে পাকড়াও করেন। এত বড় অপারেশনের পরও, সবাই বাহবা দিলেও, নিজেকে হিরো ভাবতে নারাজ এই পুলিশকর্মী। বরং তাঁর সাফ কথা, এটুকু না করলে আর দুষ্কৃতীরা পুলিশকে ভয় পাবে কেন?

রতন রায়ের কথায়, “না কোনও ভয় ভীতি কাজ করেনি। ভয় ভীতি কাজ করলে তো আমাকে ওখানে পড়ে যেতে হত, বা আমাকে সাইড হতে হত। কোনও সময়তেই পিছপা হওয়ার চেষ্টা করিনি। আমার একটা মনের বল ছিল, যে তারা ডাকাত। তাদের পুলিশের প্রতি একটা ভয় ভীতি থাকতেই হবে। নাহলে আমরা পুলিশ আর সাধারণ মানুষের মধ্য়ে পার্থক্য় থাকবে না।’’

মঙ্গলবার একবারের জন্য় ডাকাতদের গুলির মুখে তাঁকে পিছু হঠতে বা লুকোতে দেখা যায়নি। বরং ভর-ডরহীন এই পুলিশকর্মীর ছোড়া গুলি পায়ে লেগেই পড়ে যায় দুই ডাকাত। পরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয় বেশ কিছু গয়না। ASI রতন রায় জানাচ্ছেন, এলোপাথাড়ি গুলির মধ্য়েও তাঁর শুধু একটাই কথা মনে ছিল। এই ডাকাতদের ধরতে হবে। রতন রায় বলেন, আমাকে দেখা গেছে, তাদের আমি সাইডে রেখেছিলাম, ব্য়াক আপ দিয়ে রেখেছিলাম, যে পিছন দিক দিয়ে ঘেরা হোক তাদের। আমি সামনের দিক দিয়ে গুলি করি, তারা পিছন দিক দিয়ে ঘিরুক। সেরকম ইন্সট্রাকশন ছিল, যে তারা আমাকে ফলো করে গুলি করবে, অথচ, পিছন দিক দিয়ে তাদের ঘেরা হবে। ’’

ব্য়ারাকপুুরের সিক্সথ ব্য়াটালিয়ান থেকে ১৯৯৬ সালে কনস্টেবল হিসেবে কাজে যোগ দেন রতন রায়। নদিয়া জেলায় প্রথমে তিনি নাকাশিপাড়া থানায় ছিলেন। তারপর আসেন রানাঘাট থানায়। তবে শুরু থেকেই তিনি এরকম ডাকাবুকো। রতন রায়ের কথায়, “মাদের পুলিশের চাকরিতে অনেক সময় অনেক কিছু আমরা ঝুঁকি নিতে পারি না। আমাদের অনেক কিছু আইনের দিক দিয়ে বাধা থাকে। যাই হোক, কালকে যে কাজটা করেছি, সেটা আমি আমার দিক দিয়ে সাকসেসফুল ছিলাম, যে আজকে সামনাসামনি হয়েছি। এর আগেও আমি একবার হয়েছিলাম পেটোভাঙাতে, নাকাশিপাড়ায়।’’


আরও পড়ুন: Behala Accident: পা বাদ যেতে পারে মৃত সৌরনীলের বাবার, কী ভাবে চলবে সংসার? কেঁদে কুল পাচ্ছেন না মা