সন্দীপ সমাদ্দার, পুরুলিয়া: একদিকে সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে চারিদিক টালমাটাল। অন্যদিকে প্রায় শ'পাঁচেক বছর ধরে আমাদের এই বাংলার বুকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে আসছে পুরুলিয়া জেলার হিড়বহাল গ্রাম। পুরুলিয়া শহর থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরে অবস্থান। এখানে একই মন্দিরে ভদ্রকালী ও পীর বাবার পুজো হয়ে আসছে প্রায় ৫০০ বছর ধরে। ৩৬৫দিনই নিয়ম মেনে আরাধনা করা হয় মা কালী ও পীর বাবার। এখানে পীর বাবা সত্যনারায়ণ হিসেবে পুজো নেন হিন্দু পুরোহিতের কাছে। 






পৌরহিত্যেও বাকি আর পাঁচটা মন্দিরের থেকে এটি আলাদা। এখানে কোনও ব্রাহ্মণ পরিবারের পুরোহিত নন, বংশ পরম্পরায় বাউরি সমাজের মানুষ পুজো করেন। কালী পুজোর সময় এই মন্দিরে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এখানের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ বলি প্রথা। একপাশে পাঁঠা বলি ও অন্য পাশে মুরগি বলি চলে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত তো বটেই ভিন রাজ্য থেকেও হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষই এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। 


কথিত আছে, আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে গ্রামের এক সাধু জঙ্গলে তপস্যা করছিলেন। সেই সময় তিনি মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান এবং তখন থেকেই গ্রামে পুজোর শুরু। কয়েকদিন পরই মুসলমান সম্প্রদায়ের এক পীর বাবা সেখানে হাজির হন। তিনি হিন্দু পুরোহিতকে কালী মন্দিরে, আল্লার পুজোর পরামর্শ দেন। সাধুবাবা মুসলিমদের দেবতার পুজো করতে দ্বিধাবোধ করেন। সেই সময় পীর বাবা মুসলমানদের দেবতাকে সত্যনারায়ণ হিসেবে পুজো করার পরামর্শ দেন। সেই থেকে একই মন্দিরে ভদ্রকালী ও পীর বাবার পুজো শুরু হয়। যে পুজো এখনও চলছে। এখনও দূর দূর থেকে বিভিন্ন ধর্মের বহু মানুষ এই মন্দিরের পুজোয় অংশগ্রহণ করতে আসেন।


আরও পড়ুন: Kali Puja 2021 : বড় প্রতিমা বিসর্জনের সমস্যা থাকায় গরুর গাড়িতে গড়া হয় মোটা কালীর মূর্তি