কলকাতা: নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর ভূমিকা থাকে না। মানুষকে সন্তুষ্ট করতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতে সওয়াল করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) আইনজীবী। তদন্তে এখনও মিলছে নতুন তথ্য, দাবি সিবিআই-এর (CBI)। ১৬ মার্চ পর্যন্ত পার্থ, সুবীরেশদের ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ আদালতের। এসএসসি বা প্রাইমারি বোর্ড স্বাধীন সংস্থা, মন্ত্রী নিয়োগকর্তা নন। সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে জানালেন পার্থ। ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকে চেনেন না বলে দাবি (SSC Case)। 


নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত নিয়ে ফের আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই


নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত নিয়ে ফের আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শান্তিপ্রসাদ সিন্হা, চন্দন মণ্ডল-সহ ১৩ জনকে ফের আলিপুর আদালতে তোলা হয়। আদালতে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, "নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর কোনও ভূমিকা থাকে না। যেহেতু তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তি ও শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত তাই বারবার তাঁর নাম তোলা হচ্ছে। মন্ত্রী গ্রেফতার হলে মানুষ সন্তুষ্ট হবে। সেই কারণেই গ্রেফতার করা হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে।"

উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছিল ২০১৪-র ১৫ জানুয়ারি, আর পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্ত্রী হন মে মাসে। এতে মন্ত্রীর যোগ কীভাবে থাকবে? এই প্রশ্নও তোলেন পার্থর আইনজীবী। এর পর, সিবিআই-এর তদন্তকারী এবং আইনজীবীকে বিচারক প্রশ্ন করেন, "আপনি বলছেন তথ্য না থাকলে গ্রেফতার করি না, যাদের হাত নেই তাদের গ্রেফতার করি না। তাহলে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অলোক সরকারের নাম এফআইআরে কেন দিলেন?"

জবাবে সিবিআই জানায়, "তথ্যের ভিত্তিতে এফআইআর করার পর তদন্ত করি। প্রমাণ মিললে তারপর গ্রেফতার করা হয়।" তাতে ভর্ৎসনার সুরে বিচারক বলেন, "তাহলে কি মনে করছেন যে হাইকোর্ট আপনাকে ভুল তথ্য দিয়েছে? এফআইআর করার আগে প্রাথমিক তদন্ত করেন না? এটা কোর্ট, আপনার পঞ্চায়েত নয়।"


আরও পড়ুন: Partha Chatterjee: দূরত্ব বাড়িয়েছে দল, মুখেও আনে না নাম, তা-ও তৃণমূলেরই পাশে, ফের বার্তা পার্থর

এ দিন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী আরও বলেন, "১৬ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হলেও মাত্র ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ১২ জনকে ছেড়ে রাখা হয়েছে কেন?" তাঁর দাবি, বাগ কমিটির রিপোর্ট সামনে রেখে তদন্ত চলছে। অথচ সেখানে যাদের অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে সিবিআই তাঁদেরকেই সাক্ষী হিসাবে পেশ করছে। বার বার লার্জার কন্সপিরেসি, প্রভাবশালীর কথা বলা হচ্ছে। এগুলো আগে এ রাজ্যে ছিল না। সারদা তদন্তের পর সব এজেন্সি এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

এ দিন, আদালতে সিবিআই-এর আইনজীবী অভিযোগ করেন, "কোর্টে দাঁড়িয়ে অভিযোগ আনা হচ্ছে আমাদের কোনও পলিটিকাল বস আছে। কে পলিটিকাল বস? কেন এটা বলা হচ্ছে? আমাদের কোনও পলিটিকাল বস নেই। আমরা কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছি এবং বৃহত্তর যড়যন্ত্রের তদন্ত করছি।" তাতে বিচারক প্রশ্ন করেন, "এই বৃহত্তর যড়যন্ত্র শব্দটা আপনারা কোথা থেকে পেলেন? কোন বইয়ে লেখা আছে?"

সিবিআই জানায়, আইপিসি ১২০-বি ধারায় কন্সপিরেসির কথা বলা হচ্ছে। সেখানে বৃহত্তর যড়যন্ত্র না থাকলেও, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে একাধিকবার এই শব্দ উঠে এসেছে। অনেকে মিলে কোনও ক্রাইমে জড়িত থাকলে এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়। তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা তুলে ধরে এদিন জামিনের আবেদন করেন পার্থ, শান্তিপ্রসাদ, সুবীরেশের আইনজীবীরা। সিবিআই জামিনের বিরোধিতা করে বলে, নিয়োগ দুর্নীতিতে এখনও নতুন তথ্য উঠে আসছে। আগে যেগুলো অভিযোগ ছিল, তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে। এজেন্সির উপর প্রশ্ন না তুলে তথ্য প্রমাণে ভুল থাকলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত।  সিবিআই জানায়, দুর্নীতি তো হয়েছেই। কী ভাবে স্ক্যাম হবে, কী ভাবে স্ক্য়াম থেকে বেরোতে হবে, সবটাই পরিকল্পনা করে রাখা ছিল।


১৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ

এদিন, পার্থ, সুবীরেশদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৩ জনকেই ১৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আলিপুর আদালত। সূত্রের খবর, আদালতের বাইরে বেরিয়েও ঘনিষ্ঠ মহলে, পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় জানান- এসএসসি বা প্রাইমারি বোর্ড স্বাধীন সংস্থা, মন্ত্রী এখানে নিয়োগকর্তা নন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষকেও তিনি চেনেন না বলে দাবি করেন।