কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচন খালিহাতে ফিরতে হয়েছিল তাঁকে । ফুলবদল করতেই শহর কলকাতার সঙ্গে সমীকরণ পাল্টে গেল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি ছেড়ে আসা নব্য তৃণমূল নেতা বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo)। বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে জয়ী হলেন তিনি। সিপিএম প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম (Saira Shah Halim), বিজেপি-র কেয়া ঘোষ এবং কংগ্রেসের কামরুজ্জামান চৌধুরীকে পরাস্ত করে ২০ হাজার ৫৬ ভোটে জয় হাসিল করলেন বাবুল। তবে বাবুল জয়ী হলেও,বালিগঞ্জে এ বার তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটে ভাঙন ধরেছে এবং সেই ভোটের কিছুটা অংশ সিপিএম-এ গিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সে কথা একরকম স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন। যদিও তৃণমূল দেবাশিস কুমারের মতে, বিজেপি ধর্ম, জাতপাতের বাইরে বেরোতে পারছে না। সুকান্ত আগে বাংলার মাটিকে চিনুন। এখানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চলে না। তবে বিজেপি-কে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বাবুলও। বালিগগঞ্জে গেরুয়া শিবিরের ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন করলে সটান বলে দেন, "আমার কিছু বলার প্রয়োজন নেই। ফলেন পরিচয়তে।"


বাবুলকে কড়া টক্কর দিলেও দ্বিতীয় হয়ে রইলেন সায়রা


শনিবার সকালে গণনা শুরু হওয়ার পর থেকেই বালিগঞ্জে এগিয়ে ছিলেন বাবুল। তবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সায়রার সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ছিল মাত্র কয়েক হাজার। গণনা যত এগিয়েছে, এই ব্যবধান কখনও কমেছে কখনও আবার বেড়েছে। শুরুতে প্রায় ৯ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকলেও, তা কমে কখনও ৮ হাজার এবং দশম রাউন্ডের পর তা আরও কমে ৭ হাজার ৮৭২-এ নেমে যায়। ত্রয়োদশ রাউন্ডে আবার ৯ হাজার ৩৪৪ ভোটে এগিয়ে যান বাবুল। ১৫ রাউন্ডের পর  আবার ১২ হাজার ১০৮ ভোটে এগিয়ে যান তিনি। ১৭ হাজার ৯১৯ ভোটে এগিয়ে যান ১৮ রাউন্ডের শেষে। ১৯ রাউন্ডের গণনার পর ১৯ হাজার ৯০৪ ভোটে এগিয়ে ছিলেন তিনি।


নির্বাচন কমিশবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাবুলের প্রাপ্ত ভোটের হার ৪৮.৩৪ শতাংশ। ৩৩. ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে সায়রার ঝুলিতে। তবে জয়ী হলেও, বাবুলকে নামিয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রয়াত তৃণমূল নেতা সুব্রত রায়ের কেন্দ্র বালিগঞ্জে তৃণমূলের ভোটের হার কমেছে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে সেখানে ৭১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন সুব্রত। বাবুলের হাতে তা ৪৮.৩৪ শতাংশে এসে ঠেকল। অর্থাৎ বালিগঞ্জে সুব্রতকে যেখানে প্রতি ১০ জনে সাত জন ভোট দিয়েছিলেন, বাবুলকে সেখানে প্রতি ১০ জনে পাঁচ জনও ভোট দেননি। তবে তুলনামূলক ভাবে প্রাপ্ত ভোটের হার কমলেও, তৃণমূলের হয়ে বালিগঞ্জ আসনটি ধরে রাখতে সফল হলেন বাবুল। সুব্রত ১ লক্ষ ৬ হাজার ৫৮৫ ভোট পেয়েছিলেন, বাবুল পেয়েছেন ৪০ হাজার ৬২৩ ভোট।



আরও পড়ুন: Babul Supriyo : ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছেন , ' আগের দলের হয়ে ২ গোল করলে এখন ১০ গোল করব' বললেন বাবুল


বিজেপি-র হাত ধরে রাজনীতিতে পা রাখা বাবুলের সঙ্গে শহর কলকাতার সম্পর্কে নানা ওঠাপড়ার সাক্ষী থেকেছেন মানুষ। বিজেপি-তে থাকাকালীন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করার অভিযোগ যেমন উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে, তেমনই যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে অশান্তির বাঁধানোর জন্যও কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে তাঁকে। গত বিধানসভা নির্বাচনে যখন টালিগঞ্জে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই সময়ও বাবুল বিরোধী অবস্থান ছিল চোখে পড়ার মতো। ফুল বদলের পর মমতা বাবুলকে প্রার্থী করার পর দলের একাংশের মধ্যেও অসন্তোষ ছিল। সুব্রতর জায়গায়, বালিগঞ্জের মতো কেন্দ্রে, যেখানে সংখ্যালঘু ভোট ফলাফল নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বাবুলের রাজনৈতিক অতীত তৃণমূলের জয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তাঁদের। 


বালিগঞ্জের হাত ধরে কলকাতার সঙ্গে কি সমীকরণ বদলাবে বাবুলের!


পরিস্থিতি আঁচ করে নিজের সেই রাজনৈতিক অতীতকে স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি বাবুলও। তাই প্রচারে বেরিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "অবশ্যই আমার একটি অতীত রয়েছে। বিজেপি-তে থাকাকালীন দলের লাইন ধরেই এগোতে হয়েছিল। দলে থেকে সবসময় বিদ্রোহ করা যায় না। তাই ইচ্ছের বিরুদ্ধেই নেতাদের ঘৃণা ভাষণে সমর্থন জানাতে হয়েছিল। বিরোধিতা করতে পারিনি আমি। যখনই কোনও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য উড়ে আসত, সমর্থন করা ছাড়া উপায় ছিল না আমার কাছে।’’


এই মন্তব্যের জন্যও যদিও কটাক্ষ শুনতে হয় তাঁকে। বিধানসভা নির্বাচনে যেমন 'নো ভোট টু বিজেপি' রব উঠেছিল, উপনির্বাচনে তার পাশাপাশি বালিগঞ্জে 'নো ভোট টু বাবুল' রবও শোনা যায়। তবে বাবুল বরাবরই বলে আসছিলেন যে, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় তাঁকে ভরসা করেছেন। সেই ভরসার মান তিনি রাখবেন। এ দিন সকালেও সুব্রতর আসন ভরসা করে ছাড়ার জন্য মমতাকে ধন্যবাদ জানান বাবুল। আগের দলের হয়ে দুই গোল করে থাকলে তৃণমূলের হয়ে ১০ গোল করবেন বলে জানান।