পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : বাঁকুড়ায় মূর্তি-বিতর্ক অব্যাহত। আজ বিরসা মুন্ডার জন্মদিন উপলক্ষ্যে পুয়াবাগানে থাকা মূর্তিতে ফুল পরিয়ে সম্মান জানালেন বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। তাঁরা মাল্যদান করে যাওয়ার পরেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা এসে এলাকাটিকে গঙ্গাজল দিয়ে শুদ্ধিকরণ করে যান। মূর্তির নীচে বিরসা মুন্ডার একটি ছবি দিয়ে তাঁরা মাল্যদান করেন।


গত বছর ৫ নভেম্বর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাঁকুড়ার পুয়াবাগানে বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে মাল্যদান করেছিলেন। তাঁর এই মাল্যদান করাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক দানা বাঁধে। তৃণমূল ও আদিবাসী সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছিল, এই মূর্তি এক শিকারির। বিরসা মুন্ডা ও আদিবাসী সমাজকে অপমানিত করা হয়েছে। মাল্যদানের কয়েকদিন পর তৃণমূলের তরফে ওই মূর্তির কাছে গোবর ও গঙ্গাজল ছিটিয়ে শুদ্ধিকরণ করা হয়েছিল। সেই সময় বলা হয়েছিল, ওই পুয়াবাগান এলাকায় বিরসা মুন্ডার একটি মূর্তি তৈরি করা হবে। কিন্তু, তার পর প্রায় এক বছর গড়িয়ে গেছে। কিন্তু, আজও সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি।


নির্মল হাঁসদা নামে বিজেপি সমর্থক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমরা যেটা দেখেছি বা ইতিহাসে পড়েছি, সেই অনুযায়ী এটা বিরসা মুন্ডার ছবি। ওরা কেন অপপ্রচার করছে ? আদৌ ওরা দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে ? আমরা মাল্যদান করলাম। আজ জন্মদিন বিরসা মুন্ডার। আমাদের সাঁওতাল বিদ্রোহের একজন বিশেষ নেতা ছিলেন। আদিবাসীদের গর্বের মানুষ ছিলেন। বিরোধী দল হিসাবে ওরা অপপ্রচার করতে পারে।


বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রি দানা বলেন, এটা নিয়ে অনেকের মধ্য়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। আমাদের দেখার দরকার নেই। উনি তো আদিবাসী সমাজের রূপ নিয়ে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। বিরোধিতা করতে হবে অমিত শাহ এখানে এসেছিলেন বলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাঁকুড়ার মাটিতে পা দিয়েছিলেন, তখন সামনে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন ছিল। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে হবে বলে বিরোধিতা করেছিল। ওদের ব্যর্থতা, ৩৬৫ দিন পেরিয়ে গেলও, গঙ্গাজল ছিটিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে এখনও পর্যন্ত মূর্তি হল না।


যদিও তৃণমূল নেতা মধুসূদন ডাঙ্গর বলেন, এক বছর আগে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরসা মুন্ডা মনে করে ভুলবশত শিকারির গলায় মাল্যদান করেছিলেন। এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায় অপমানিত বোধ করেছিল। তখন তারা গোবর-জল, গঙ্গাজল দিয়ে বিশুদ্ধিকরণ করেছিল । আবার ঠিক এক বছর পরে একই ঘটনা। বিজেপির বিধায়ক নীলাদ্রি দানা জানেন না যে এটা বিরসা মুন্ডা নন। তবুও এই মূর্তিতে মাল্যদান করেছেন। জায়গাটি অপবিত্র হয়েছে বলে মনে করছি। আমরা এলাকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে এখানে শুদ্ধিকরণ করছি। শুদ্ধিকরণ করে ওঁর জন্মদিবস উপলক্ষে প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করলাম। গোবর ও গঙ্গাজল দিয়ে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে এলাকাটা শুদ্ধিকরণ করলাম। মূর্তি হবে। টেন্ডার হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অফিস বন্ধ ছিল। সেই কারণে টেন্ডার প্রক্রিয়া দেরি হয়েছিল।