পূর্ণেন্দু সিংহ, ছাতনা:  ভুয়ো আধার কার্ড তৈরি করে সিম কার্ড তুলে চলত প্রতারণা। বাঁকুড়ায় ই ওয়ালেট প্রতারণাকাণ্ডের তদন্তে নেমে, আরও এক জালিয়াতির খোঁজ পেল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, গ্রেফতার হওয়া ছাতনার বাসিন্দা সব্যসাচী কুণ্ডু ভুয়ো আধার কার্ড তৈরির মাস্টারমাইন্ড।


ব্যাক্তি এক অথচ তাঁর ভিন্ন নাম। একই ব্যাক্তি অথচ তাঁর আধার নম্বর আলাদা। ঠিক এই ভাবেই বিভিন্ন ব্যাক্তিদের ছবি কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মতন করে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড বানিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল জেলার একটি চক্র।


গোপনে এইভাবেই ভুয়ো আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড বানানো ছিল এই চক্রের মূল কাজ।  জেলার বিভিন্ন প্রান্তে গোপনে এই চক্রটি কাজ করছিল।  


ভুয়ো আধার কার্ড ও ভুয়ো ভোটার কার্ড এরা বানাতো মুলত হাজার হাজার সিম কার্ড এক্টিভেশনের জন্য। এই সিমকার্ড গুলি দিয়ে ই ওয়ালেট জালিয়াতির চক্র গজিয়ে উঠেছিল বাঁকুড়া জেলায়। তদন্তকারীদের হাতে এসেছে বেশ কিছু ভুয়ো আধার কার্ড।


বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, ভুয়ো আধার কার্ডের মাধ্যমে সিমকার্ড তুলে চলত প্রতারণা। গত রবিবার ছাতনার খড়বনা গ্রাম থেকে গ্রেফতার হয় সব্যসাচী কুণ্ডু। 


পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতকে জেরা করে বেশ কিছু ভুয়ো আধার কার্ড উদ্ধার হয়। নিজের আত্মীয় ও বিভিন্ন জনের ছবি ব্যবহার করে তা তৈরি করত সব্যসাচী। এরপর ভুয়ো আধার কার্ডের মাধ্যমে সিম কার্ড তুলে তা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিত। সেই একাজের মাস্টারমাইন্ড।


পুলিশের আরও অনুমান, শুক্রবার রাতে ছাতনা এলাকার পুকুর থেকে যে ৯০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি সব্যসাচীই ব্যবহার করত। প্রমান লোপাটের জন্য সেগুলি জলে ফেলে দিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারী দল।


এদিকে, ই ওয়ালেট জালিয়াতিতে সব্যসাচী ধরা পড়ায় হতবাক প্রতিবেশীরা। ছাতনার খড়বনা গ্রামের রাস্তার ধারে বাবা অনন্ত কুণ্ডুর চায়ের দোকান। আর নিজের ছিল একটি ট্রাক্টর। 


গ্রামবাসীদের দাবি, বিভিন্ন কাজে নিজের ট্রাক্টর ভাড়া দিত সব্যসাচী। এই ছিল সব্যসাচীর পরিবারের উপার্জন। এটাই জানতেন এলাকার মানুষ। কিন্তু বাড়ির মধ্যে বসেই তাঁর এতোবড় মাপের জাল কারবার ঘুনাক্ষরে টের পায়নি প্রতিবেশীরা। 


পুলিশের দাবি, সব্যসাচী কুণ্ডু নিজের বাড়িতে বসেই ভুয়ো তথ্য বানিয়ে বিভিন্ন সিম কার্ড ডিলারদের কাছ থেকে সিম সংগ্রহ করত। সেগুলি অ্যাক্টিভেশনের মধ্য দিয়ে নিজের কম্পিউটার থেকেই ই ওয়ালেট জালয়াতি ও কিউ আর কোড জালায়াতির কারবার চালাত সব্যসাচী। 


পুলিশের দাবি, সব্যসাচীর সঙ্গে এই কাণ্ড যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত গঙ্গাজলঘাটির যুবক বাপি গরাইয়ের মাধ্যমে ডিলারের কাছ থেকে ভুয়ো নথির মাধ্যমে সিমকার্ড সংগ্রহ করত সব্যসাচী ধারনা পুলিশের। 


এদিকে, পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতারণাকাণ্ডের শিকড় সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলছে। ধৃতের বাড়ি থেকে ৫৭ টি কিউ আর কোড উদ্ধার করেছে পুলিশ সেগুলি সব জাল বলেই দাবি তদন্তকারীদের। কিভাবে লেনদেন হতো তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।


বাঁকুড়া পুলিশের দাবি, জেলার গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে এই চক্র এবং ভিন রাজ্যের সাথেও যোগ রয়েছে এই চক্রের। বিভিন্ন ভাবে জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তদন্তকারী আধিকারিকরা।