পূর্ণেন্দু সিংহ, বেলিয়াতোড়: বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় রেঞ্জে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতির দল। তছনছ করছে জমির ফসল। চিন্তায় ঘুম উড়েছে গ্রামবাসীদের।


বেলিয়াতোড় রেঞ্জের পার্শ্ববর্তী লিগামোচন, শ্রীকৃষ্ণপুর, সারুলিয়া, বৃন্দাবনপুর-সহ একাধিক গ্রামে তাণ্ডব চালাচ্ছে ৮০টি হাতির দল। দিনের বেলা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে নষ্ট করছে জমির ফসল। প্রায় ২০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে দাবি। 


বন দফতরের উদাসীনতার ফলেই ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। এক গ্রামবাসী বলেন, আমরা পুরো আতঙ্কে আছি। হাতি এসে আমাদের সমস্ত ফসলের নষ্ট করে দিয়েছে।


তিনি বলেন, আমরা কিভাবে জীবনযাপন করব, কিভাবে বাঁচব ভেবে পাচ্ছি না। ঋণ-ধার করে চাষ করেছি জমি জায়গা বিক্রি করে এখন মালিকের দেনা মেটাতে হবে। 


তিনি বলেন, একটাই চাষ আমাদের। আমরা চাই হাতিগুলোকে বন দফতর অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাক। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, বন দফতরের কোন সদর্থক ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।


আরও পড়ুন: হাতির হাত থেকে ফসল বাঁচাতে বাঁকুড়ার রামকানালি গ্রামে ১২৩ বছর ধরে চলছে গজলক্ষ্মীর আরাধনা


আরেক গ্রামবাসী বলেন, অনেকদিন ধরে হাতিগুলো এলাকায় রয়েছে। বনকর্মীরা আসছেন, দেখছেন আর চলে যাচ্ছেন। কোনও কাজ করছেন না। হাতিগুলি একরের পর একর জমি ধ্বংস করে দিচ্ছে। সরকার সেরকম ক্ষতিপূরণ দেয় না। 


তাঁর প্রশ্ন, এই অবস্থায় কীকরে সংসার চলবে? তিনি বলেন, আমাদের এক ফসলি জমি সেটাও তছনছ হয়ে যাচ্ছে দিনের বেলাতে। জঙ্গলে খাবার না থাকার কারণে হাতি জমিতে চলে আসছে। 


তিনি যোগ করেন, সরকার পুরো উদাসীন। নিজেদের জমি রক্ষা করার জন্য আমরা নিজেরাই রক্ষা করছি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।


অন্য এক গ্রামবাসী বলেন, বিঘার পর বিঘা জমির ধান খেয়ে দিয়েছে হাতিগুলি। হাতিগুলোকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করছে না বনদফতর। আমরা নিজেরা হাতিগুলোকে তাড়াতে পারছি না। প্রায় ৬০ থেকে ৭০টার বেশি হাতি আছে জমির ক্ষেতে।


যদিও বন দফতরের দাবি, হাতির খাদ্যাভ্যাস বদলেই এই সমস্যা। লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে তারা। কৃষকদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে বন দফতর।


বেলিয়াতোড়ের রেঞ্জ অফিসার মহিবুল ইসলাম বলেন, গত দশ বছরে তথ্য বলছে, হাতিদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। এখন হাতিগুলি কৃষি ফসল বেশি পছন্দ করছে। 


তিনি যোগ করেন, গ্রামের মানুষকে বোঝানো হচ্ছে। যে সমস্ত চাষির ক্ষতি হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুসারে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। প্রায় বেলিয়াতোড় রেঞ্জ এলাকায় কুড়ি হাজারের মতো জমির ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।