পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : লক্ষ্মীপুজোই, তবে একটু অন্যরকম। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনই বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের রামকানালি গ্রামের মানুষ আরাধনা করেন গজলক্ষ্মীর। হাতির হাত থেকে বাঁচাতে হবে লক্ষ্মীরূপী ফসল! তাই একইসঙ্গে লক্ষ্মী ও গজরাজকে তুষ্ট রাখার চেষ্টা। সেই চেষ্টারই ফল স্বরূপ বাঁকুড়ার রামকানালি গ্রামে ১২৩ বছর ধরে হয়ে আসছে গজলক্ষ্মীর আরাধনা, এমনটাই জানালেন গ্রামবাসীরা।


এই পুজো ঘিরে, আজও বেলিয়াতোড়ের ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ মাতেন আনন্দে। প্রতি বছর জাঁকজমক করে রামকানালি গ্রামে পুজো হয় গজলক্ষ্মীর। করোনা আবহে, গত দু’বছর আড়ম্বর খানিক কমলেও, উৎসাহের অভাব নেই গ্রামবাসী। কারণ, রামকানালি গ্রামে যে দুর্গাপুজোর চল নেই। তাই বছরভর অপেক্ষা থাকে গজলক্ষ্মী পুজোর। 


প্রতি বছর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন আরাধনা হয় গজে উপবিষ্ট দেবীর। এবারও শুরু হয়েছে পুজো। অনন্যা রূপে মাকে সাজিয়ে চলছে পুজো-অর্চনা। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় রেঞ্জের রামকানালি গ্রাম। জঙ্গলঘেরা গ্রামে মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে জঙ্গল ও বন্যপ্রাণ। শত বছর আগেও এই গ্রামে যেমন হাতির উপদ্রুব ছিল, আজও তাই। বাঁকুড়ার রামকানালির বাসিন্দাদের কথায়, 'পূর্বপুরুষরা এই পুজো করে এসেছে। হাতির উপদ্রব ছিল। লক্ষ্মীর সঙ্গে হাতিরও পুজো করি। যাতে হাতিরা শান্ত থাকে।'




এমনিতেই গত এক সপ্তাহ ধরে যে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাতি। দিন-রাতের বালাই নেই, যখন তখন গ্রামে ঢুকে ফসলের ক্ষতি করে হাতির পাল।
তাই ভক্তির পাশাপাশি এই পুজোয় মিশে ভয়ও। সেই ভয় ও ভক্তি থেকেই লক্ষ্মী ও গজরাজকে তুষ্ট রাখার চেষ্টা করে চলেছেন গ্রামবাসী। একরাশ ভয়ের মাঝে ভক্তির সুরে বাসিন্দারা বলছেন, 'হাতিরা ভীষণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ভালো করে আরাধানা করে বলব, ওদের যেন সরিয়ে দেয়।' গজলক্ষ্মীর আরাধনার মাঝেই প্রত্যাশা যেন লক্ষ্মী ও গজরাজ দু'জনেই তুষ্ট থাকেন।


আরও পড়ুন- দলমার দাঁতালের উপদ্রব, দিশেহারা বাঁকুড়ার গ্রামবাসীরা


আরও পড়ুন- পথে নামল গজরাজ, বেঁধে গেল হুলুস্থুল