কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, বাঁকুড়া: নিয়োগ দুর্নীতি, মহার্ঘভাতার দাবিতে উত্তাল রাজ্য। সেই আবহেই বাঁকুড়ায় বিতর্কিত পদক্ষেপ পুলিশের। সেখানে সিভিক ভলান্টিয়ারদের প্রাথমিক শিক্ষায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলল। বাঁকুড়া পুলিশের তরফে 'অঙ্কুর' প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। তার আওতায় প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ক্লাস নেবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। তাদের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। 


বুধবার বাঁকুরা পুলিশ এই 'অঙ্কুর' প্রকল্পের ঘোষণা করে। বাঁকুড়া পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকের ক্লাস নিতে ইতিমধ্যেই ৪৬টি স্কুলকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারও। সেখানেই প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের পড়াবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। পুলিশের কাজ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা। সেই পুলিশ কেন শিক্ষা বিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে, উঠছে প্রশ্ন।


বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি বলেন, "সিভিক ভলান্টিয়ারদের মোটামুটি শিক্ষিত। পড়াশোনাতেও ভাল তাঁরা। সলেই নিরিখেই বেছে নেওয়া হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য হল, প্রত্যেক অঞ্চল থেকে স্কুলকে চিহ্নিত করেছি। প্রত্যেক স্কুলের জন্য় এই এলাকার বাসিন্দা দুই সিভিক ভলান্টিয়ারকেও বেছে নেওয়া হয়েছে। এমনিতেই ওই এলাকায় থাকে। বেশি দূরে যেতেও হবে না। প্রতিদিন এক-দু'ঘণ্টা সময় দিতে হবে প্রাথমিক স্কুলে।"


বাঁকুড়া পুলিশের এই সিদ্ধান্তে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, "সিভিক ভলান্টিয়াররা ক্লাস নেবেন। বাঁকুড়া মডেল এবার গোটা রাজ্যে। সরকারি স্কুলে যাতে আর কেউ ভর্তি না হয়, তাই শিক্ষার মান নামানোর ছক। চাকরি দিলে আবার বেতন, ডিএ-র ঝামেলা থেকেও মুক্তিও।"


সিভিক ভলান্টিয়াররা স্কুলে পড়াবেন কেন, প্রশ্ন তুলছে অন্য় বিরোধী দলগুলিও। সরকার শিক্ষাব্যবস্থা চালাতে না পারলে, দায়িত্ব ছেড়ে দিক বলে দাবি তাদের। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ি বলেন, "এমনিতেই স্কুল শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেছে। অসংখ্য স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। প্রাথমিক স্কুলে একটি মাত্র শিক্ষক রয়েছেন, এমন নজিরও রয়েছে। এখন সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে লেখাপড়া! আসলে কেন্দ্রীয় সরকার যে নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা আনছে, তাতে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে তুলে দিয়ে বেসরকারিকরণের চেষ্টা রয়েছে। এটা সেই প্রকল্পেরই অংশ।"


এ নিয়ে যদিও বিরোধীদেরই আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁর বক্তব্য, "৩৪ বছরে শিক্ষা রসাতলে চলে গিয়েছিল। ইংরেজি তুলে দিয়ে বামেরা শিক্ষাকে যে জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শিক্ষার প্রগতির জন্য একাধিক প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। তাঁর হাতে শিক্ষার অগ্রগতি ঘটেছে। বাংলাকে অপছন্দ করলেও, কেন্দ্র বাংলার শিক্ষাব্যবস্থার প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে। তাই কারা কী করে, ভাল ভাবেই বোঝা যায়।" কিন্তু শান্তনু সরাসরি জবাব এড়িয়ে গেলেও, সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে স্কুলে পড়ানোর সিদ্ধান্তে শওরগোল পড়ে গিয়েছে।