পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: জ্বালানির খরচ, মেরামতির জন্য খরচ। তার সঙ্গে রয়েছে কর্মীদের বেতন। সব মিলিয়ে যা খরচ সেটুকুও উঠছে না বাস চালিয়ে। ফলে বাধ্য হয়েই বাস (Bus) তুলে নিল খোদ সরকারি সংস্থা দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ। গত এক মাসে বাঁকুড়া ডিপো থেকে ধাপে ধাপে সাতটি সরকারি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।


বাসে যাত্রী হচ্ছে। টিকিটও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু যত সংখ্যক যাত্রী হচ্ছে তাতে টিকিট বিক্রি করে খরচও উঠছে না বলে সূত্রের খবর। সেই কারণেই বাঁকুড়া ডিপো থেকে বাস তুলে নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এদিকে পরপর সাতটি বাস তুলে নেওয়ায় প্রবল ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিত্যযাত্রীরা। প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য ওই বাসগুলির উপর ভরসা করতেন অনেকেই। হঠাৎ এতগুলি সরকারি বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প কীভাবে মিলবে তা নিয়েই চিন্তায় তাঁরা।         


জ্বালানির জ্বালা:
দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ( South Bengal State Transport Corporation) বাঁকুড়া (Bankura) ডিপোয় কর্মরত কিছু কর্মী সূত্রে জানা গিয়েছে মাস খানেক আগেও এই ডিপো থেকে সব মিলিয়ে ত্রিশটি বাস চলাচল করত। সারাদিনে বিভিন্ন রুটে চলত বাসগুলি। গত ৬ বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ছাড়ের পরেও আগের অবস্থায় ফিরে আসেনি তেলের দাম। এদিকে বাসের ভাড়া বৃদ্ধি হয়নি এক পয়সাও। এর সঙ্গে কোপ পড়েছে কোভিডেরও। কোভিড (Covid) পরবর্তী পরিস্থিতিতে সব বাসেই যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে। একই ছবি দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাসেও। ফলে লোকসানের বহর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সংস্থার তরফে জানা গিয়েছে, কিলোমিটার প্রতি তিরিশ টাকা ভাড়া সংগ্রহ হলে বাসের খরচ ওঠে। কিন্তু বাঁকুড়া ডিপো থেকে চলাচল করা ওই সাতটি সরকারি বাসের ক্ষেত্রে ভাড়া আদায়ের ওই পরিমাণ গড়ে কুড়ি টাকার নীচে। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই সাতটি বাস তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা।


আরও সমস্যা:
সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে বাসের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য টাকা বরাদ্দ করেনি সরকার। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগের মাসে সংস্থার কর্মীদের বেতনেও কাটছাঁট করতে হয়েছে। গতমাসে সংস্থার কর্মীদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ২৫ শতাংশ। তারপরও আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সংস্থা যে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে তা ফের পরিষ্কার হল। কারণ, খরচ সামাল দিতেই একের পর এক বাস তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। এদিকে একের পর এক দূরপাল্লার বাস তুলে নেওয়ার কারণে সমস্যায় সাধারণ যাত্রীরা। বহু যাত্রীকে বাস ধরতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে। প্রয়োজনে শেষ পর্যন্ত ভরসা করতে হচ্ছে বেসরকারি বাসের উপরই।


গোটা ঘটনায় রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে বিজেপি (BJP) নেতৃত্ব। পাল্টা জ্বালানির লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজনৈতিক দড়ি টানাটানির মাঝে ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ নাগরিকের।  


আরও পড়ুন: ডাক্তার নেই, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ জরুরি পরিষেবা, কোন হাসপাতালে?