পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: সবুজ-সতেজতার শেষ শুরু হয়েছিল আগেই। প্রায় বৃক্ষশূন্য হতে বসেছিল বাঁকুড়ার (Bankura News) শুশুনিয়া পাহাড় (Susunia Hill) এবং সংলগ্ন এলাকা। নামমাত্র যা অবশিষ্ট রয়েছে, তার বুক ফুঁড়ে উঠে আসছে আগুনের লেলিহান শিখা। গনগনে আগুনের আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে বহু দূর থেকেও। বসন্তের আগমন ঘটতেই এ বছরও ফের একই ঘটনা। ঝরাপাতার আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে শুশুনিয়া পাহাড় (Susunia Hill Fire)।


রংয়ের উৎসবে যখন মাতোয়ারা গোটা রাজ্য, সেই সময় শনিবার ভর সন্ধ্যেয় আগুন রংয়ের আভা দেখে সেঁধিয়ে গেলেন শুশুনিয়া পাহাড় সংলগ্ন এলাকার মানুষ। সন্ধ্যায় আচমকাই পাহাড়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান স্থানীয়রা। ঘুটঘুটে অন্ধকারের বুক ফুঁড়ে প্রথমে পাহাড়ের মাঝখানের চূড়াটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ের অন্যত্রও।


রুক্ষ আবহাওয়ায় জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা নতুন না হলেও, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার ঠিক মার্চ মাস নাগাদ, বসন্তে শুশুনিয়া পাহাড়ে এমন অগ্নিকাণ্ড নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বারও তার অন্যথা হল না। কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃত ভাবে শুকনো ঝরাপাতায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কিন্তু বছর বছর অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হলও, কে বা কারা এর নেপথ্যে রয়েছে, তার কিনারা হয়নি আজও।


আর এই উদানীসতাই ফি বছর কেড়ে নিচ্ছে বিপুল সংখ্যক পাখি, সরীসৃপ এবং বন্যপ্রাণীর জীবন। আগুনের গ্রাসে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে শুশুনিয়া পাহাড়। নষ্ট হচ্ছে সেখানকার পরিবেশের ভারসাম্য। বছরভর সবুজায়ন নিয়ে গালভরা প্রতিশ্রুতি শোনা গেলেও, শুশুনিয়া পাহাড়ে বছর বছর আগুনের গ্রাসে নষ্ট হয়ে যাওয়া গাছপালা, জীববৈচিত্র নিয়ে উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না।


এ নিয়ে প্রশ্ন করলে ঝাঁটিপাহাড়ি রেঞ্জারের আধিকারিক ইশা বোস জানান, দুপুর থেকে আগুন নেভানোর কাজ চলছে। পৌঁছেছে দমকল বাহিনীও। তবে এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর পিছনে কেউ বা কারা জড়িত রয়েছেন কি না জানতে চাইলে জানান, এখনই কিছু নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। 


আরও পড়ুন: Panihati Murder: ৭দিনের মধ্যে ফের পানিহাটিতে খুন! বিকেল ৫টায় রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার । Bangla News


কিন্তু এলাকার বাসিন্দা বলেন, ‘‘পাহাড়ের উপরে ধূমপান করতে যায় অনেকে। তা করতে গিয়ে দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে যত্রতত্র পেলে দেন। তা থেকে শুকনো পাতায় আগুন ধরতে কত ক্ষণ! অল্প সময়ের মধ্যে আগুন ছড়িয়ও পড়ে। তবে শুধু স্থানীয় ছেলেরা নয়, বাইরে থেকেও অনেক মানুষ বেড়াতে আসেন। ইচ্ছাকৃত ভাবেও আগুন ধরানো হতে পারে। অত উপরে কোথায়, কে, কী করছে, তা বোঝা সম্ভব নয়।’’ পাহাড়ে আগুন ছড়ানো নিয়ে বন দফতরের তরফে বার বার সচেতন করা হলেও, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।


এর আগে, গত বছর মার্চ মাসেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। এক সন্ধেয় এমন আচমকাই আগুনের লেলিহান শিখা নজরে পড়ে। তার পর দমকা হাওয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যই তা ছড়িয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায়। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতে অনেক দেরিতে শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ। বেশ কয়েক দিনের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। তার আগে জানুয়ারি মাসে এবং ২০২০-র এপ্রিল মাসেও দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যায় শুশুনিয়া পাহাড়কে। শুকনো পাতা থেকে আপনা আপনি বছর বছর আগুন ধরছে, নাকি স্থানীয়দের অভিযোগই সত্য, ধন্দ কাটেনি এখনও।