কলকাতা: 'শরৎ পূর্ণিমার নিশি নির্মল গগন, মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় পবন/ লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ, বৈকুন্ঠধামেতে বসি করে আলাপন।' আজ বাংলার ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। 


ধন-সম্পদের দেবীকে তুষ্ট করতে জোরকদমে তোড়জোড়। শঙ্খধ্বনি, আলপনায় আন্তরিকতার সঙ্গে রীতি মেনে আরাধনা।



প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে মন্দির অথবা ঠাকুর ঘরে লক্ষ্মী দেবীর প্রতিমা থাকবে না, এমনটা হতেই পারে না। মনে করা হয়, ধনসম্পদ, আধ্যাত্মিক সম্পদ, সৌভাগ্য ও সৌন্দর্যের দেবী। তিনি বিষ্ণুর পত্নী, অন্য দিকে মা লক্ষ্মীর অপর নাম মহালক্ষ্মী, তার বাহন হল সাদা পেঁচা।


কোজাগরী কেন বলা হয়! এর অর্থ কী?


এই শব্দের অর্থ হচ্ছে, ‘কে জেগে আছো?’। হিন্দুদের পুরাণ মতে, আশ্বিন মাসের এই পূর্ণিমা রাতে দেবী লক্ষ্মী ঘরে ঘরে আসেন। তিনি খোঁজ নিয়ে যান যে, কে কে জেগে আছে? এই রাতে মায়ের পুজো যারা করেন, তাদের ঘরেই তাঁর আগমন ঘটে।


লক্ষ্মী পূর্ণিমার সময়



পূর্ণিমার মুহূর্ত শুরু – ১০ কার্ত্তিক, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (২৮ অক্টোবর, ২০২৩) তারিখে সকাল ৪.১৭ টা।
পূর্ণিমার মুহূর্ত শেষ – ১১ কার্তিক, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (২৯ অক্টোবর, ২০২৩) তারিখে সকাল ১.৫৩ টা।


কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর সময় –
২৮ অক্টোবর বেলা ১১টা ৩৯ মিনিট থেকে শুরু করে ২৯ অক্টোবর রাত ১২টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত।


মা লক্ষ্মীর পুজোর প্রচলন


কথিত আছে এক দোলপূর্ণিমার রাতে বৈকুণ্ঠে গিয়ে নারদ মর্তিবাসীর দুঃখের কথা লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে বলেন। লক্ষ্মী দেবী বলেন মানুষের কুকর্মের ফলেই তাঁদের আজ এই পরিণতি। কিন্তু লক্ষ্মীদেবী নারদমুনির অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে মর্ত্যলোকে এলেন লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে। মর্ত্যলোকে এসে দেখলেন অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। পিতার মৃত্যুর পর তার ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় তাঁদের মা আত্মহত্যার করতে যাচ্ছিলেন। তখন লক্ষ্মী দেবী তাকে লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে বুঝিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান। 


এরপর ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করালেন। তারপরই তাদের সংসারের সব দুঃখ দূর হয়ে গেল। এই ভাবে ধীরে ধীরে অবন্তি নগর ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে লক্ষ্মী দেবীর মাহাত্ম্য কথা প্রচার হয়ে গেল। আবার লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় মানুষের ভাড়ার কখনও শূন্য হয় না। তাই সংসারের সুখ শান্তি এবং ধন রত্ন লাভের জন্য লক্ষ্মী দেবীর পূজা করা হয়।