শান্তনু নস্কর ও সমীরণ পাল, বাসন্তী : আবাস যোজনার (Awas Yojana) ঘর না পাওয়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে তৃণমূল বিধায়ককে (TMC MLA) ঘিরে বিক্ষোভ দেখাল এলাকাবাসী। শাসকদলের তরফে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও, আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি। আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গাতেও।
আবাস যোজনা নিয়ে দুর্নীতি, বঞ্চনা ও স্বজনপোষণের অভিযোগ ঘিরে এখন দিকে দিকে বিক্ষোভ-উত্তেজনা। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে তৃণমূল। এই আবহেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর না পাওয়ায় সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডলকে সামনে পেয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন ফুলমালঞ্চ গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা।
পালনি সর্দার নামে বাসন্তীর এক বাসিন্দা বলেন, যাদের ঘর আছে, জমি জায়গা আছে, তাদের দিয়েছে। বাইরে থেকে চলে যাচ্ছে। কেউ দেখে না। আদিবাসীর নাম করে ঘর আসছে, সব লুটেপুটে খাচ্ছে। আমরা কী করেছি ?
সম্প্রতি বাসন্তীতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ হয়েছে। অভিযোগ, বাসন্তী ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় যেসব মানুষের কাঁচা বাড়ি রয়েছে, তাঁদের সিংহভাগেরই তালিকায় নাম নেই। আবার কারও অভিযোগ, ঘর পাওয়ার তালিকায় পরিবারের সদস্যের নাম থাকলেও, তার টাকা নিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্যকে ! এপ্রসঙ্গে মামনি সর্দার নামে বাসন্তীর এক বাসিন্দা বলেন, ২০১৮ সালে শ্বশুরের নামে ঘর এসেছিল, দেয়নি। অন্য লোককে দিয়ে দিয়েছে। যারা টাকা দিতে পারছে, ২০-৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে পারছে, তাদের দিচ্ছে। আমরা তো দিতে পারছি না।
এই পরিস্থিতিতে এদিন বাসন্তীর বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানাতে যান গ্রামবাসীর একাংশ। সেইসময়ই তাঁদের সামনে পড়ে যান বাসন্তীর তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল। আর তখনই ক্ষোভ উগড়ে দেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
যদিও বাসন্তীর তৃণমূল বিধায়ক শ্যামল মণ্ডল বলেছেন, আবাসের ঘর যাদের নাম ওঠেনি, রাজ্য সরকার শীঘ্রই তাদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আবার কর্মসূচি গ্রহণ করবে। যদি কারও নাম থাকে, তাহলে বাতিল হবে। ৫০ শতাংশ নাম বাতিল হবে।
আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে দেগঙ্গার নুরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে। সোমবার ছিল উত্তর ২৪ পরগনার নুরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের ছেলের বউভাত। এদিন সকালেই গ্রামজুড়ে লাগানো হয় এই সব পোস্টার। বিজেপির বারাসাত সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, যে সমস্ত মানুষ পঞ্চায়েত প্রধানের নামে পোস্টার মেরেছে তাঁরা সঠিক কাজ করেছেন। কারণ নুরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উমা দাস প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘরের টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছেন তার প্রমাণ রয়েছে।
দেগঙ্গার নুরনগর পঞ্চায়েতের প্রধান ও তৃণমূল নেত্রী উমা দাস বলেন, সম্মানহানি করার জন্য বিরোধীরা চক্রান্ত করে এই পোস্টার মেরেছে।
তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী নিলুপদ দাস বলেন, এক ছেলে চাকরি করে, অন্য ছেলে বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করে। তাই ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনও দুর্নীতি করে টাকা নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
সব মিলিয়ে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবাস-দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে উত্তাল রাজনীতি।
আরও পড়ুন ; দোতলা বাড়ি রয়েছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পে তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের শাশুড়ির নাম!