দক্ষিণ ২৪ পরগনা: পঞ্চায়েত ভোটের আগে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে ফের তৃণমূলের দ্বন্দ্ব! স্থানীয় যুব তৃণমূল কর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ক্য়ানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মোরসেলিম শেখ নামে আক্রান্ত যুব তৃণমূল কর্মী। ঘটনায় বাসন্তী থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যদিও অভিযোগ নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আজাদ কয়ালের।


হাঁটুতে, হাতে, পেটে ক্ষতচিহ্ন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন যুব তৃণমূল কর্মী। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে যুব তৃণমূল কর্মীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। আক্রান্তের দাবি, মঙ্গলবার সন্ধেয় স্থানীয় তৃণমূল নেতা আজাদ কয়ালের নির্দেশে, তাঁর ওপর হামলা চালায়, জনা কুড়ি তৃণমূল কর্মী সমর্থক। রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়।


রাতেই ক্য়ানিং মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আক্রান্ত যুব তৃণমূল কর্মীকে। আক্রান্ত যুব তৃণমূলকর্মী মোরসেলিম শেখ বলছেন, 'আমিও টিএমসি পার্টি করি। যুব করি। সকালবেলা আমাদের একটা ছেলেকে মেরে নামিয়ে দিয়েছে আজাদ কলের ছেলেরা। ওই কারণে সকাল থেকে আসিনি। সন্ধেবেলা বাড়ির সামনে চা খাচ্ছি, বিশ-কুড়ি জন এসে কোদালের বাঁট, লোহার রড, লোহার পাইপ নিয়ে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একদম ফেলে মেরেছে।কিন্তু কী কারণে এই হামলা? সম্প্রতি বাসন্তীর তৃণমলের একাংশ অভিযোগ তোলে, দলীয় কর্মসূচিতে তাদের ডাকছেন না দলীয় বিধায়ক শ্য়ামল মণ্ডল। এলাকায় পৃথক গোষ্ঠী তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি। 


এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে, গত রবিবার, বাসন্তীতে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মীরা। অভিযোগ, সেই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায়, যুব তৃণমূল কর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাসন্তীতে তৃণমূলের কোন্দল, যুব তৃণমূল কর্মীকে মার তৃণমূল নেতার অনুগামীদের! এ নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপ। ঘটনায় বাসন্তী থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে আক্রান্ত যুবক তৃণমূল কর্মীর পরিবার। 


সোমবারও তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে বাসন্তীতে। এক পক্ষের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তোলে অন্য গোষ্ঠী। জখম হন বেশ কয়েকজন। যদিও ব্যক্তিগত বিবাদের কারণেই সংঘর্ষ বাধে বলে দাবি করেন তৃণমূল বিধায়ক।


রবিবারের পর সোমবারও। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বাসন্তীতে দফায় দফায় প্রকাশ্যে আসে তৃণমূলের কোন্দল! ক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, হামলার অভিযোগ তুলল আরেক গোষ্ঠী!
গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধ করা হয়। অভিযুক্তদের ধরতে এলে, পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা। বাদ গেল না কিছুই!


রবিবার বাসন্তীর কলতলা মোড়ে, দলীয় সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তৃণমূলেরই নেতা-কর্মীদের একাংশ। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। 


কিন্তু বিক্ষোভের মুখে পড়েও, দলীয় কোন্দলের কথা সেদিন মানতে চাননি মন্ত্রী। যদিও অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা কার্যত স্বীকার করেছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক। মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। এরই মধ্যে সোমবার সেই কলতলা এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। একে অন্যের বিরুদ্ধে ধারাল অস্ত্র, লাঠি, রড দিয়ে হামলার অভিযোগ তুলেছে দুই পক্ষ। জখম হয়েছেন দুই তৃণমূল কর্মী। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে, রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। 



ঘটনাস্থলে গিয়ে দু-পক্ষের বেশ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। তখন সহকর্মীকে বাঁচাতে, কার্যত পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূলের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক। শনিবারের ঘটনার পর এলাকার তৃণমূল বিধায়ক, কোন্দলের কথা কার্যত মেনে নিলেও, এদিনের ঘটনার পিছনে ব্যক্তিগত বিবাদ রয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।


সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে কখনও মন্ত্রীর সামনে ক্ষোভ। তো কখনও নিজেদের মধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন দলের কর্মীরা। তৃণমূল নেতৃত্ব এখন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়, সেটাই এখন দেখার।