ভাস্কর ঘোষ, বেলুড়: রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অন্যতম সহ-অধ্যক্ষ স্বামী প্রভানন্দজী মহারাজ পয়লা এপ্রিল তারিখে সন্ধে ৬টা ৫০ মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। প্রয়াত স্বামী প্রভানন্দজী মহারাজের মহাসমাধি উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মিশন বেলুড় মঠে আজ সকাল থেকেই বিশেষ পূজা, ভজন এবং স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই উপলক্ষে আজ সকাল থেকেই অসংখ্য ভক্ত এবং অনুগামীরা বেলুড় মঠে উপস্থিত হয়েছেন। 


এদিন সকালে মঠে শ্রীশ্রীঠাকুরের বিশেষ পূজা, মঙ্গলারতি, বৈদিক মন্ত্রপাঠ হয়। এরপর ভক্তিগীতি, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃতপাঠ ও ব্যাখ্যা, বাউল, কীর্তন, ভজন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিকালে রয়েছে স্মরণ সভা। সেখানে মঠের মহারাজরা স্বামী প্রভানন্দজি মহারাজকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখবেন। এদিনই মা সদাব্রত ভবন থেকে প্রসাদ বিতরণের আয়োজন করা হয়েছে ভক্তদের জন্য। সন্ধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের মন্দিরে সন্ধ্যারতির আয়োজন করা হয়েছে। এদিন ভাণ্ডারা উপলক্ষে বহু দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তরা এসেছেন বেলুড় মঠে। 


১৯৩১ সালে তিপ্পেরা জেলার আখাউড়া গ্রামে (অধুনা বাংলাদেশ) জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রভানন্দজী মহারাজ।  রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সপ্তম অধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দজী মহারাজের কাছ থেকে তিনি মন্ত্রদীক্ষা লাভ করেন এবং ১৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যোগদান করেন নরেন্দ্রপুর আশ্রমে।


নরেন্দ্রপুর, সারদাপীঠ ও সেবাপ্রতিষ্ঠানে তিনি নানা সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নরেন্দ্রপুরে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকরূপে কিছুকাল সেবা করেন। নরেন্দ্রপুরে থাকাকালীন দুই বছর তিনি Institute of Social Education and Recreation (বর্তমানে লোকশিক্ষা পরিষদ)–এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। রামকৃষ্ণ মিশন সারদাপীঠের অন্তর্গত বিদ্যামন্দির কলেজের তিনি অধ্যক্ষ ছিলেন কয়েকবছর। কোলকাতায় স্থিত রামকৃষ্ণ মিশন সেবাপ্রতিষ্ঠান হাসপাতালের সহকারী সম্পাদকরূপে তিনি তিন বছর সেবা করেন। পরবর্তীকালে প্রভানন্দজী পুরুলিয়া বিদ্যাপীঠ এবং দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত Ramakrishna Mission Institute of Culture–এর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। 


১৯৮৩ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রভানন্দজী রামকৃষ্ণ মঠের অছি পরিষদ ও রামকৃষ্ণ মিশনের পরিচালন সমিতির সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ খ্রীষ্টাব্দ থেকে দীর্ঘ এগার বছর তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ২০০৭ থেকে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন পাঁচ বছর। ২০১২ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে প্রভানন্দজী রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ঐ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। 


ইংরাজী এবং বাংলা ভাষায় বহু গ্রন্থের রচনা করেন প্রভানন্দজী। বাংলা বইয়ের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য শ্রীরামকৃষ্ণের অন্ত্যলীলা (দুই খণ্ডে), ব্রহ্মানন্দ চরিত, সারদানন্দ চরিত ও রামকৃষ্ণ মঠের আদিকথা। ইংরাজী ভাষায় তাঁর লেখা First Meetings with Sri Ramakrishna এবং Early History of Ramakrishna Movement শীর্ষক গ্রন্থাবলী সুপ্রসিদ্ধ। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা ইংরাজী ও বাংলা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সুবক্তা প্রভানন্দজী বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। মহারাজের সুচিন্তিত বক্তৃতাবলী তাঁর মেধা ও পাণ্ডিত্যের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।