সমীরণ পাল ও রুমা পাল, কলকাতা: এক জায়গায় নাম মকিদ মোল্লা ! অন্য বিধানসভায় আবার তিনিই হয়ে গেছেন গোরাচাঁদ বিশ্বাস! উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাত ও দমদমে এরকমই ভোটার লিস্টে 'ডবল এন্ট্রি' সামনে এসেছে। অভিযুক্তের পরিবার স্বীকার করে নিয়েছে, দুটি পরিচয়েই ভোট দেন অভিযুক্ত। এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।কৃষ্ণনগরে একটি ব্যক্তির আলাদা দুটি ভোটার কার্ড থাকার অভিযোগ তুলে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে চিঠি দিয়েছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন, 'যোগ্যদের থেকেও টাকা তুলেছিলেন জীবনকৃষ্ণ ' ! এবার আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে নিয়ে এল ED
এ যেন যে-ই রাম, সে-ই রহিম! নাম আলাদা, ধর্ম আলাদা, ঠিকানা আলাদা! কিন্তু ছবিটা একই! একইসঙ্গে দুই পরিচয়েই ভোট দিয়ে যাচ্ছেন একজন!প্রথম ভোটার কার্ডে নাম মকিদ মোল্লা, অপরটিতে নাম রয়েছে গোরাচাঁদ বিশ্বাস। SIR-আবহে এরকমই অভিযোগ সামনে এল উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের কদম্বগাছিতে!
অভিযুক্ত ভোটারের আত্মীয় সাদ্দাম হোসেন : আমি এরকম শুনেছি যে, ওখানে একটা ভোটার আছে। এখানে তো ভোট দেয়ই। প্রশ্ন: নাম পরিবর্তন করার কারণ কী?অভিযুক্ত ভোটারের আত্মীয় সাদ্দাম হোসেন : এটা বলতে পারব না আমি। প্রশ্ন: উনি দুই নামে ভোট দেন। এখানে ভোটের সময় ভোট দিতে আসেন। অভিযুক্ত ভোটারের আত্মীয় সাদ্দাম হোসেন : হ্যাঁ হ্যাঁ। ইনি হলেন মকিদ মোল্লা। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসাতের কদম্বগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৮ নম্বর বুথের ভোটার! এই হল ভোটার লিস্টে তাঁর নাম ও ছবি। অথচ অভিযোগ, এই একই ব্যক্তির নাম রয়েছে দমদম বিধানসভা কেন্দ্রের ১১৪ নম্বর বুথেও। এই হল দমদমের ১১৪ নম্বর বুথের ভোটার তালিকার ছবি। বারাসাত থেকে দমদম, সাড়ে ১১ কিলোমিটার দূরত্বে ছবি এক থাকলও, বদলে গিয়েছে নাম-ধর্ম! মকিদ মোল্লা নাম বদলে হয়ে গেছে গোরাচাঁদ বিশ্বাস। বাবার নাম আবদুল মুজিদ বদলে গিয়ে হয়েছে মন্টু বিশ্বাস। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ভোটের সময় দীর্ঘদিন ধরে দুটি পরিচয়েই ভোট দিয়ে আসছেন মকিদ মোল্লা ওরফে গোরাচাঁদ বিশ্বাস। এমনই দাবি করেছে তার পরিবার।
প্রশ্ন:কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে মকিদ মোল্লা, বাবার নাম মজিদ মোল্লা। আবার এদিকে আরেকটা ভোটার তালিকা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে গোঁরাচাঁদ বিশ্বাস নামে তিনি ভোট দিচ্ছেন দমদমে। এটা কেন?মকিদ মোল্লার ভাই আব্দুল শহিদ মোল্লা : সেটা ওখানে থাকে। ওখানেই পরিচিত। মানে ওখানকার বাসিন্দা হয়ে গেছে। নাম পরিবর্তন করেছে। বাবার নামও পরিবর্তন করেছে। প্রশ্ন : এখানে ভোট দিতে আসে না?মকিদ মোল্লার ভাই আব্দুল শহিদ মোল্লা: হ্যাঁ, এখানেও ভোট দেয়। গতবারও ভোট দিয়েছে। এখানে কোনও বাড়ি নেই। ভোটের সময় বাড়ি আসে।
কদম্বগাছির বাসিন্দার কীর্তি সামনে আসায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি রাজ্য কমিটি সদস্য তরুণকান্তি ঘোষ বলেন, তৃণমূল তার ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য এবং অসত্য উপায় অবলম্বন করে জেতার জন্য এরকম ভুয়ো ভোটার তৈরি করে রেখেছে। এই ভুয়ো ভোটার যদি লিস্ট থেকে বাদ যায় তাহলে তৃণমূল ধরাশায়ী হবে। তৃণমূল কংগ্রেস কদম্বগাছি অঞ্চল সভাপতি নিজামুল কবির বলেন, বেশ কয়েক বছর আগে, ও ধর্ম পরিবর্তন করে কলকাতায়, দমদমে কোথায় রয়েছে। ওখানে ভোটার তালিকায় সে নাম তুলেছে। এটা তো নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। নাম কাটবে কি কাটবে না। এটা নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। আমাদের দল কেন দায় নেবে এটা? এমন অভিযোগ আরও আছে। যেমন কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটার মহাসিন শেখ। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই একই ব্যক্তির দুটি ভোটার কার্ড রয়েছে। দুটিতেই বাবার নাম, জন্মের তারিখ এক হলেও,নামের একাংশ আলাদা! আলাদা দুটি EPIC নম্বরও। এই ঘটনায় তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে চিঠি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অশুতোষ চট্টোপাধ্যায়।