ঝিলম করঞ্জাই, দীপক ঘোষ ও রাজীব চৌধুরী, কলকাতা : রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, ইসকনের সন্ন্যাসীদের একাংশকে তৃণমূলনেত্রীর আক্রমণ ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্য়মন্ত্রীর এই বাগযুদ্ধের মধ্য়েই নরেন্দ্র মোদির পুরুলিয়ার ভোট প্রচারের সভামঞ্চেই দেখা গেল পুরুলিয়া ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এক সন্ন্যাসীকে। 


শনিবার মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, 'ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে আমি আগে খুব শ্রদ্ধা করতাম। আমার শ্রদ্ধার্ঘে একটা তালিকায় তারা অনেক দীর্ঘদিন ধরে আছে। কিন্তু, যে লোকটা বলে আমি তৃণমূল কংগ্রেসকে এজেন্ট বসতে দেব না, সে লোকটাকে আমি সাধু বলে মনে করি না। তার কারণ তিনি সরাসরি রাজনীতি করে দেশটার সর্বনাশ করছেন। আমি আইডেন্টিফাই করেছি, কে কে করেছেন? যেমন আমি শুনলাম আসানসোলের একটি মিশন আছে। ইস্কনও মনে রাখবেন ৭০০ একর জমি দিয়েছি। ইস্কন শহর করার জন্য। নদিয়াতে। ইস্কনেরও একটা মন্দির আছে। ইস্কনেরও একটা মিশন আছে। একটা-দু'টো তো থাকবেই। দিল্লি থেকে নির্দেশ আসে, বলে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য বলো। কেন করবে সাধু-সন্তরা এই কাজ? কিন্তু, রামকৃষ্ণ মিশনকে সবাই সম্মান করে। শ্রদ্ধা করে। ওদের কাছে একটা হোয়াটসঅ্য়াপ আছে, গ্রুপ। ওদের যারা মেম্বার হয় তাদের নাম, যারা দীক্ষা নেয়। তাদেরকে আমি ভালবাসতে পারি। আমি দীক্ষা নিতে পারি। কিন্তু, রামকৃষ্ণ মিশন ভোট দেয় না কোনওদিনও। এটা আমি জানি। তাহলে আমি অন্যকে কেন ভোট দিতে বলব? কেউ কেউ ভায়োলেট করছে, সবাই নয়। কিন্তু, মনে রাখবেন স্বামী বিবেকানন্দের বাড়িটাই থাকত না আপনাদের এই মেয়েটা যদি বেঁচে না থাকত।'


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর জবাবে বলেন, ' এতদিন ভোটে বাংলার মানুষকে ভয় দেখাত, ধমকাত, হিংসা করাত তৃণমূল। এবার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। সেবা-সদাচারের জন্য বিশ্বে পরিচিত ইস্কন, হরে কৃষ্ণ হরে রাম করেন যাঁরা, স্বামী বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ... ভারতের নাম উজ্জ্বল করে। কিন্তু আজ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ইস্কন, রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রমের সন্ন্যাসীদের প্রকাশ্যে ধমকাচ্ছে। মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। এমন সাজা দিন, যাতে কখনও সন্ত, মোহন্ত, মহাপুরুষদের অপমান না করতে পারে।'


এই তর্ক-বিতর্কের আবহে সোমবার মোদির সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেল ভারত সেবাশ্রমের আরেক সন্ন্যাসীকে। যাঁর উপস্থিতি ঘিরে পাল্টা সমালোচনায় সরব হয়েছে তৃণমূল। 


আর মোদির মঞ্চে উপস্থিত স্বামী নিত্যসুধানন্দ মহারাজ বলছেন, ' দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে এত সামনে থেকে পাব, সেটা কখনই আশা করিনি। তো তাঁকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ পুরুলিয়া শাখার পক্ষ থেকে আমরা সম্বর্ধনা দিতে গেছিলাম। খুব ভাল লাগল। ' তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ সবসময় জাতির সেবায় থাকে। তাতে যদি উনি রাজনৈতিক কিছু দেখতে পাচ্ছেন, তাহলে সেটা তাঁর ব্যাপার।' সবমিলিয়ে, বিতর্ক থামার কোনও নাম নেই।


আরও পড়ুন :


জগন্নাথদেবকে নিয়ে বিরাট ভুল ! বিতর্কের মাঝে ক্ষমা চাইলেন সম্বিত, প্রায়শ্চিত্ত করতে ৩ দিন রাখছেন উপবাস