উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও আবির ইসলাম, বোলপুর : ধোঁয়াশা ? বিভ্রান্তি ? বুঝে বলছেন ? না ভুল করে বলছেন? না কি কৌশল? না কি অন্য কিছু? বুঝে ওঠা দায়! আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে (Municipal Election) কে জিতবে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যে প্রশ্নের উত্তরে বীরভূম জেলা তৃণমূল (TMC) সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) পাশে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরণ ঘটালেন কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায় (Mukul Roy)। তিনি এক লহমায় বলে গেলেন, 'এই পুরসভা নির্বাচনে সারা বাংলায় বিপুল ভাবে ভারতীয় জনতা পার্টি জয়ী হবে।' পাশে দাঁড়ানো তৃণমূল কর্মী তখন পাশ থেকে তাঁকে 'তৃণমূল' বলে ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করলেন। যা শুনে মুকুল রায়ের সংযোজন, ' হ্যাঁ, ভারতীয় জনতা পার্টি মানেই তৃণমূল।'


মুকুল রায়ের প্রসঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, 'মুকুল রায়ের বক্তব্য দল সমর্থন করে না। উনি মাঝে বেশ কয়েকবার যেমন কথা বলেছেন তাতে মনে হচ্ছে ওঁর কোনও মানসিক সমস্যা হচ্ছে।' মুকুল রায়ের ছেলে শুভ্রাংশু রায়ের দাবি, 'মা চলে যাওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা অস্থির রয়েছেন বাবা। উনি কী বলেছেন জানি না, তবে উনি তৃণমূলেই রয়েছেন।'


গত কয়েকমাস ধরেই কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের রাজনৈতিক অবস্থান ঘিরে নানা জল্পনা চলছে রাজ্য-রাজনীতিতে। মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে দাবি করে, তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবি তুলেছে বিজেপি। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বিধানসভার অধ্যক্ষের ঘরে শুনানিও চলছে। তারই শুনানিতে শুক্রবার কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়কের আইনজীবীরা অধ্যক্ষের কাছে একটি পিটিশন জমা দেন। সূত্রের খবর, পিটিশনে দাবি করা হয়ে, মুকুল রায় বিজেপিতে আছেন। কখনও তৃণমূলে যাননি। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেই সময় তাঁর স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। মাথার ঠিক ছিল না। সেই সময় তিনি হয়তো কোনও কর্মসূচিতে গিয়েছেন। তবে সবটাই ছিল সৌজন্যমূলক। তিনি কোনও দল বদল করেননি।


২০২১-এর বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরে, গত ১১ জুন, তৃণমূল ভবনে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়কে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই প্রেক্ষিতে বিধানসভার অধ্যক্ষকে চিঠি দেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাতে দাবি করা হয়, মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাঁর বিধায়ক পদ খারিজ করা হোক। টানাপোড়েনের জল গড়ায় আদালত অবধি। এরই মধ্যে কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন মুকুল রায়। তারও বিরোধিতা করে বিজেপি।


শুক্রবার বিধানসভার অধ্যক্ষের ঘরে শুনানিতে মুকুল রায়ের আইনজীবীরা যে পিটিশন জমা দেন, তাতে দাবি করা হয়, মুকুল রায় বিজেপিতে আছেন। কখনও তৃণমূলে যাননি। অধ্যক্ষের উপস্থিতিতেই এই বয়ানের বিরোধিতা করেন বিরোধী দলনেতার আইনজীবীরা। ৩ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। 


আরও পড়ুন- 'মুকুল রায় বিজেপিতেই আছেন', বিধানসভার অধ্যক্ষর ঘরে শুনানিতে দাবি আইনজীবীর