সিঙ্গুর: এক বছরের বেশি সময় ধরে কৃষক আন্দোলনে (Farmers' Protest) উত্তপ্ত ছিল রাজধানী সংলগ্ন এলাকা। বাংলার মাটিতেও ব্যাপক ভাবে কৃষক আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার ডাক দিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তবে দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের আইনের বিরুদ্ধে, বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সরকারের কৃষি নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলেন ডাক দিলেন শুভেন্দু।
মমতা সরকারের সমালোচনায় এ দিন শুভেন্দু বলেন, ‘‘বাংলার অবস্থা খুবই খারাপ। সার নিয়ে কালোবাজারি চলছে। বিদ্যুতে কোনও ভর্তুকি নেই। গত দু’মাসে তিন জন কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা সরিয়ে তৃতীয় ব্যক্তি মারফত প্রকল্প এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাংলায় বৃহত্তম কৃষক আন্দোলন হতে চলেছে। ’’ কৃষক আন্দোলন নিয়ে নবান্ন অভিযানেরও হুঁশিয়ারি দেন শুভেন্দু। নন্দীগ্রামে (Nandigram) যে ভাবে জান লড়িয়ে দিয়েছিলেন, কৃষকদের জন্য সেই উদ্যমেই লডা়ই করবেন বলে জানান তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরে এসে সর্ষে ছড়িয়েছিলেন, কিন্তু সিঙ্গুরে চাষবাসও নেই, ন্যানো কারখানাও নেই, এমন কটাক্ষও করেন শুভেন্দু। কৃষিজমি নষ্ট করে মমতা দেখিয়ে দিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু প্রত্যুত্তরে তৃণমূলের মুখপাত্র কুমাল ঘোষ বলেন, ‘‘যদি ন্যানো নিয়ে এত দুঃখ হয়, তাহলে আগে বলেননি কেন? জমি আন্দোলনের উপর দাঁড়িয়েই তো উনি এবং ওঁর বাবা সাংসদ হয়েছেন। কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। উনি নিজেই বলে বেড়ান যে আন্দোলন করেছেন। তাহলে সর্বনাশা আন্দোলন করলেন কেন?’’ আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনের উপর দাঁড়িয়ে অধিকারী পরিবার সুবিধা ভোট করেছেন বলেও অভিযোগ করেন কুণাল।
প্রকৃতির রোষে সর্বস্ব খোয়ানো এবং আত্মঘাতী কৃষকদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্য, ন্যূনতম মূল্যে সার, বীজ, সেচকার্যের জ্য় বিদ্যুতে ভর্তুকি-সহ একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে জমি আন্দোলনের ভূমি সিঙ্গুরে (Singur) তিন দিনের ধর্নায় বসেছে বিজেপি। মঙ্গলবার জমি আন্দোলনের অন্যতম ক্ষেত্র নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুও মঙ্গলবার তাতে যোগ দেন। আর সেখান থেকেই জমি আন্দোলনে একসময়ে মমতার ছায়াসঙ্গী শুভেন্দু, তৃণমূলনেত্রীর (TMC Chief Mamata Banerjee) বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘ভোট এলেই গঙ্গাস্নান’, পানাজিতে মোদিকে কটাক্ষ মমতার
চলতি মাসের ১৪, ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর, তিন দিন ধরে সিঙ্গুরে সিংহের ভেড়ি এলাকায় ধর্না চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। তাদের দাবি, কৃষকদের সমস্যা নিয়ে উদাসীন রাজ্য সরকার। বাংলার কৃষকরা অত্যন্ত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। টানা বৃষ্টিতে বিঘের পর বিঘে জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শীতকালীন ফসলও । কিন্তু কৃষকদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না রাজ্য সরকার।
যদিও যে সিঙ্গুর থেকে বাংলার মসনদে মমতার উত্থান, সেখানে বিজেপি আদৌ কল্কে পাবে না বলে মনে করছে জোড়াফুল শিবির। তাদের দাবি, দিল্লিতে আন্দোলন চলাকালীন কৃষকদের জঙ্গি, খালিস্তানি বলতেন গেরুয়া নেতৃত্ব। সেখানে কেন্দ্র পিছু হটার পর এখন কৃষ বিরোধী তকমা ঝেড়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা। তবে বিধানসভা নির্বাচনে যে ভাবে সিঙ্গুর থেকে মুখ লুকিয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল বিজেপি-কে, এ বারও সিঙ্গুরের মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করবেন বলে দাবি তৃণমূলের।