কলকাতা: সহজ সরল ভাষায় একটি যুগের অবসান বলাই যায়। কিন্তু শুধুমাত্র এক যুগ তো নয়, যুগের পর যুগ হাল ধরে রেখেছিলেন তিনি। এ বার সেই গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেলেন বিমান বসু (Biman Bose)। ৮৩ বছর বয়সে। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে দফায় দফায় আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সিপিএম-এর (CPM) রাজ্য কমিটি থেকে বিদায় নিলেন তিনি।


এ দিন সূর্যকান্ত মিশ্রের থেকে বাংলায় সিপিএম-এর রাশভার উঠল মহম্মদ সেলিমের (Mohammed Salim) হাতে। সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক নিযুক্ত হলেন তিনি। আর একই সঙ্গে রদবদল ঘটে গেল সিপিএম-এর রাজ্য কমিটিতে। একে একে বিদায় নিলেন বিমান, সূর্যকান্ত, রবীন দেব, গৌতম দেব, মৃদুল দে-র মতো প্রবীণ নেতারা।


প্রায় চার দশক রাজ্য কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিমান। তবে শুধু রাজ্য কমিটিই নয়, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদ থেকেও বিমান সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। জীবনের সিংহভাগ যেখানে অতিবাহিত হয়েছে, সেখান থেকে বিদায় নিতে কষ্ট হচ্ছে না কি? কোনও খারাপ লাগাই কি নেই? বিমানের সাফ জবাব, “না, খারাপ লাগছে না। আমি জানি, নতুনরা দায়িত্ব নেবে। কাউকে তো দায়িত্ব ছাড়তেই হবে! তবেই তো নতুন কেউ দায়িত্ব নেবে!” একই সুর ধর পড়ল রবীনের (Rabin Deb) গলাতেও। তিনি বলেন, “খারাপ লাগবে কেন? ছাড়তে সবাইকেই হয়। এটাই আমাদের সংগঠনের নিয়ম।”


আরও পড়ুন: Mohammed Salim: সূর্যকান্ত জমানায় ইতি, নতুন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম


উল্লেখ্য, এ দিন পদবদলের পর সিপিএম-এর রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন সুশান্ত ঘোষ, শতরূপ ঘোষ, সুদীপ সেনগুপ্ত, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ১৪ জন। মহিলা এবং তরুণ প্রজন্মের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন রাজ্য কমিটিতে। সৃজন ভট্টাচার্য, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, প্রতীকুর রহমানরা সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে ছিলেনই। উত্তর ২৪ পরগনা থেকে রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেলেন মহিলা নেত্রী আত্রেয়ী গুহ। DYFI-এর রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহাকেও সিপিএমের রাজ্য কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়েছে।


সিপিএম সূত্রে খবর, রাজ্য সম্মেলনে ১৬ দফা কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে। রেড ভলান্টিয়ারদের কীভাবে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বাংলায় গত কয়েক বছরে ৪২ হাজার পার্টি সদস্য কমেছে সিপিএমের। কী ভাবে তা বাড়ানো যায়, তার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দলকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর দায়িত্ব পড়েছে সেলিমের কাঁধে। সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী-সহ সংসদীয় রাজনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। কিন্তু আগে বিপদে পাশ ঘুরলেই বিমানকে পেতেন। এখন আর সেই উপায় থাকবে না। কী করে সামাল দেবেন? সেলিমের জবাব, ‘ম্যায়ঁ তো অকেলা হি চলা থা...।’