ভাস্কর ঘোষ, বীরভূম: বীরভূমে মর্মান্তিক মৃত্যু। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা। বীরভূমের সদাইপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত ২। ঘটনা ঘিরে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা। দেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশকে তাড়া গ্রামবাসীদের। গাড়িতে করে মেশিন নিয়ে ধান কাটতে যাচ্ছিলেন ২ জন। কোনও ভাবে বিদ্যুতের তারে লেগে যায় মেশিনের একাংশ। নিমেষে গাড়ি সমেত বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যান ২ জন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২ জনের।


যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁরা সম্পর্কে দুই ভাই। নিহত দুজনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের মথুরা জেলায়। ওই দুজন ধান কাটার মেশিন নিয়ে এসেছিলেন। ওই এলাকায় বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাঁরা ধান কাটছিলেন। এদিন সেই কাজেই একটি গাড়িতে ধান কাটার মেশিন নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সময়েই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই রাস্তার উপরেই ছিল ১১০০০ ভোল্টের তার। কোনওভাবে মেশিনের একটি অংশ ওই তারে লেগে যায়। সেই সময় তার সরাতে গিয়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন ওই দুজন ব্যক্তি। সদাইপুরের এক বাসিন্দার দাবি, 'এখন মাঠে ধান কাটা চলছে। মেশিন আসছিল। মেন রোডের ওপরে তার রয়েছে। তার নীচু হয়ে গিয়েছে, বারবার অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। বিদ্যুৎ দফতরের জন্য়ই এমন হয়েছে। প্রথমে একজন ঝটকা খায়। ওকে বাঁচাতে গিয়ে আরেকজনও ঝটকা খায়।' গোটা ঘটনায় প্রশাসনের উপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। এক স্থানীয় বাসিন্দার অভিযোগ, 'গরিব মানুষ হুক করলে অনেক জরিমানা। জমি বেচে টাকা দিতে হয়েছে। এখন কেন কিছু হয়নি।'


কী অভিযোগ:
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় রাস্তায় উপর নীচু হয়ে ঝুলছিল তার। বারবার বিদ্যুৎ দফতরকে জানালেও কোনও কাজ হয়নি। এদিন দুর্ঘটনার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামবাসীরা। এলাকায় পুলিশ এলে তাদের উপরে ক্ষোভ গিয়ে পড়ে। দেহ উদ্ধার করতে এলে পুলিশকে বাধা দেন গ্রামবাসীরা। বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের আসার জন্য দাবি জানাতে থাকেন তাঁরা। প্রবল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, মারমুখী জনতাকে দেখে কার্যত পিছু হঠে পুলিশ। দেহ আটকে রেখে চলে বিক্ষোভ। তারপরেই সিউড়ি ও সদাইপুর থানা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশকর্মী ওই এলাকায় আসেন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে দেহ উদ্ধার করা হয়। দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, জানিয়েছেন বীরভূমের পুলিশ সুপার।


প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সলীল ভট্টাচার্যের মন্তব্য, 'পুলিশ চাপের নীচে এমনভাবে কাজ করছে, পুলিশের উপরে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, অবিশ্বাস এমন হয়েছে যে কিছু হলেই পুলিশের উপর হামলা হচ্ছে। পুলিশের ওপরে মানুষের আস্থা নেই। বীরভূমের সদাইপুরের ঘটনা তারই উদাহরণ।'


শুরু রাজনৈতিক তরজা:
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, 'এটা দুর্ঘটনা। কিন্তু কোনও দুর্ঘটনা যদি বারবার ঘটে চলে তাহলে তা দুর্ঘটনা হয় না। এটা দফতরের গাফিলতি। পুলিশ প্রশাসনের কাজে মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে।' দুঃখের ঘটনা। প্রশাসন সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। এরাজ্যের পুলিশ, বিজেপি শাসিত রাজ্যের মতো নয়। পুলিশের উপর হামলা সমর্থনযোগ্য নয়, পাল্টা আক্রমণ শান্তনু সেনের।


কলকাতাতেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু:
ফের কলকাতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জোড়া মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। জামাইকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হল মা ও মেয়ের। একবালপুরের ঘটনা। আহত জামাইকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সকাল ৭টা নাগাদ জিআই তারে ভেজা জামাকাপড় মেলতে যান ইজহার আখতার। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন শাশুড়ি ও ইজহারের স্ত্রী। SSKM-এ নিয়ে গেলে মা ও মেয়েকে মৃত বলে ঘোষাণা করেন চিকিৎসকরা। CESC-র প্রতিক্রিয়া এখনও মেলেনি।


আরও পড়ুন: আমেরিকার মাটি থেকে ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্বে! কীভাবে? মাতৃদিবসের গোড়ার কথা