ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: কার্যকরী সমিতির সদস্য পদ খুইয়েছেন আগেই। এ বার দলের অন্দরেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বিজেপি (BJP) নেতা দুধকুমার মণ্ডল (Dudhkumar Mondal)। দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই উষ্মা প্রকাশ করলেন তিনি। জানালেন, তাঁকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। দলীয় কার্যক্রমে তাঁকে যোগ দিতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ  নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে তৃণমূল (TMC)।


ফের দলের বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশ দুধকুমারের


বীরভূমে (Birbhum News) গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক কাজে তিনি এখন ব্রাত্যজন বলে জানালেন দুধকুমার মণ্ডল। উষ্মা প্রকাশ করলেন দলের কিছু পদক্ষেপ নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, "বাংলার মানুষ বিজেপিকেই চাইছে। বাংলার মানুষ ২০২১-এও বিজেপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দলের কিছু পদক্ষেপ মানুষের মনোগ্রাহী হয়নি বলেই বাংলায় বিজেপি খানিকটা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে।'


এর আগেও দুধকুমারকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে দুধকুমার। একবার ফের দলের বিরুদ্ধে সরব হলেন তিনি। পুজোর মুখে সোমবার রামপুরহাটের একটি হোটেলে দুঃস্থদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন ময়ূরেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি-র সদস্য দুধকুমার। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানে ছিল না দলীয় পতাকা শুধু নরেন্দ্র মোদি, শুভেন্দু অধিকারী এবং দুধকুমারের নিজের ছবিই চোখে পড়ে। 


আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: তৃণমূল সরকার চাকরি দেবে না, দিলে আদালত দেবে : দিলীপ ঘোষ


বীরভূমের গেরুয়া শিবিরের সংগঠন তৈরির সঙ্গে দুধকুমারের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু সেই দুধকুমারই এখন বিজেপির মধ্যে কোণঠাসা বলে শোনা যাচ্ছে। জল্পনা বেড়েছে খোদ প্রাক্তন জেলা সভাপতির কথা থেকেই। তিনি বলেন, "ব্যক্তিগত ভাবে রাজ্যনেতারা আমাকে দলীয় প্রোগ্রামে যেতে এবং কার্যক্রমে অংশ নিতে নিষেধ করেছেন। দল আমাকে কোনও দায়িত্ব দেয়নি পঞ্চায়েত নির্বাচনে মাঠে নামার জন্য, বা দলের হয়ে কিছু করার জন্য আগ্রহ প্রকাশও করেনি। আমাকে বিশেষ ভাবে জানায়নি। আমাকে যদি দল মাঠে নামতে বলে পশ্চিমবঙ্গে, আমি আমার জেলার কথা বলছি, কীভাবে বীরভূম জেলাকে তৈরি করতে হয়, মাটি আমাদের অনুর্বর যেটা এখন দেখছি, সেই মাটিকে কীভাবে উর্বর ও শস্যশ্যামলা করতে হয়, দলের তরফে তা দেখিয়ে দেব।"


রাজ্য বিজেপির কার্যকরী সমিতির সদস্য পদে থাকাকালীন গত জুন মাসে এই অভিযোগ তুলে সোশাল মিডিয়ায় সরব হন দুধকুমার। সেই সময় তাঁর অভিযোগ ছিল, বীরভূমে বিজেপির জেলা কমিটি থেকে ব্লক কমিটি, সবই গঠন করা হয়েছে তাঁর সঙ্গে আলোচনা না করেই। দলের যেসব সমর্থক ও কার্যকর্তারা তাঁকে ভালবাসেন, তাঁদের চুপচাপ বসে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। 


ওই ঘটনায় আবার দুধকুমারের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা ট্যুইট করে লিখেছিলেন, "দুধকুমারদা’র মতো মানুষ সংগঠন থেকে হারিয়ে গেলে, তা চিন্তার এবং উদ্বেগের।" এ বারও দুধকুমার সরব হতেই তাঁকে সমর্থন করেছেন অনুপম। যদিও ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতির মুখে।


দুধকুমারের সমর্থনে এগিয়ে এলেন অনুপম হাজরা


অনুপমের কথায়, "উনিই এক সময় বীরভূমে বিজেপি-কে তৈরি করেছিলেন। যদি আবার কাজে ফিরতে চান, তাহলে রাজ্যস্তরে আবার আবেদন করতে পারেন। কোথায় আবেদন করতে হবে, তা উনি জানেন।" তবে বিজেপি-র বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, "ওঁকে দল দলীয় কার্যক্রম থেকে সরিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তারপরেও উনি কেন যাচ্ছেন, আমি জানি না।"


এ নিয়ে বিজেপি-কে কটাক্ষ করেছেন বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, "দলের বুথে কোনও ভিত্তি নেই। কোনও দিশা নেই। বীরভূম জেলায় শত ভাগে বিভক্ত দলটা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এসব কথা বলে দলকে চাঙ্গা করতে চাইছেন। তাতে আরও সলিলে সমাধি হচ্ছে।"


জুন মাসে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পর রাজ্য বিজেপির কার্যকরী সমিতির সদস্য পদ খুইয়েছিলেন দুধকুমার মণ্ডল। এবার কী হয় সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।