নান্টু পাল, বীরভূম : প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে ঘোষ গ্রামের মা লক্ষ্মী। সেই থেকে এই গ্রামের আরাধ্যা দেবী মা লক্ষ্মী। এই গ্রামের কোনো বাড়িতেই লক্ষ্মী পুজো হয় না। মন্দিরেই মা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন গ্রামবাসীরা।
মা লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ
কথিত আছে, হর্ষবর্ধনের আমলে সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী সেখানে এসেছিলেন । মায়ের সাধনার আসনের সন্ধানে বীরভূমের রাঢ় অঞ্চলে ঘুরতে ঘুরতে তিনি একচক্র ধাম বীরচন্দ্র পুরে গর্ভবাসে এসে পৌঁছন। জানা যায়, ভরা বর্ষায় যমুনায় সাঁতরে তিনি ঘোষ গ্রামে পৌছান। রাত্রি হয়ে যাওয়ায় তিনি নিম গাছের নিচে বসে ঘুমিয়ে পড়েন। সেখানে স্বপ্ন দেখেন ত্রেতা যুগে রাম, লক্ষ্ণণ , হনুমান বনবাসের জন্য কিছু দিন এই গ্রামে কাটিয়েছিলেন। ঘোষ গ্রামে ওই নিম গাছের তলায় তিনি সাধনা শুরু করেন বলে কথিত আছে । দীর্ঘ দিন কঠোর সাধনা করার পর তিনি মা লক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশ পান।
শ্বেত পদ্মে সঙ্কেত
কথিত আছে, তাঁকে মা লক্ষ্মী স্বপ্ন দিয়ে বলেন, 'যেখানে তুই সাধনা করছিস সেখানে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজোর ব্যবস্থা কর। '
এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেন গ্রামের সজল ঘোষ নামে এক কৃষক। একদিন কৃষি কাজে ওই কৃষক মাঠে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে। দয়াল কৃষি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এমন সময় একটি শ্বেত পদ্ম ভাসতে দেখে ফুল তোলার জন্য বাবার কাছে সে বায়না ধরে। ছেলের বায়না রাখতে দয়াল ঘোষ শ্বেত পদ্মটি তুলতে গেলে সেটি সরে যায়। ব্যর্থ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু
এরপর রাতে তিনি স্বপ্ন পান, কোনও সাধক পুরুষই শ্বেত পদ্ম তুলতে পারবে। এরপর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ব্রহ্মচারীর কাছে ছুটে যান। সেদিন ছিল কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি। ব্রহ্মচারী দয়াল কে সঙ্গে নিয়ে শ্বেতপদ্ম ও ভাসমান কাষ্ঠখন্ড তুলে নিয়ে এসে গঙ্গার মাটির রঙ দিয়ে লক্ষ্মীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেছিলেন।
সেই থেকে আজও ঘোষ গ্রামে কোনও বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো হয় না । গ্রাম্য দেবী মা লক্ষ্মী তাঁদের আরাধ্য দেবতা।মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দির রাজা কৃষ্ণচন্দ্র খবর পেয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কোজাগরী রাতে ৯ টি ঘট ভরে নবঘটের পুজো করা হয়। ১০৮ টি ক্ষীরের নাড়ুর নৈবেদ্য দেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুজোর দিন সকাল থেকেই গ্রামের মানুষ ভিড় করে সেখানে। শুধু কোজাগরী লক্ষ্মী নয় প্রতি বছর পৌষ মাসে বৃহস্পতিবার ধুমধাম করে পুজো হয়, মেলাও বসে।