আবীর দত্ত, নান্টু পাল, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: পাড়া ঢুকে জ্বালিয়ে দেওয়া হল পর পর বাড়ি। জতুগৃহ থেকে রক্ষা পেলেন না নারী-শিশু কেউই। তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চললেও, বীরভূমের (Birbhum Fire) রামপুরহাটের (Rampurhat Fire) বগটুই কাণ্ডের নেপথ্য কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। তবে পাথর এবং বালি খাদানের কোটি কোটি টাকার বখরা নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড বলেও দাবি স্থানীয় একটি সূত্রের। সিপিএম-এর (CPM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও এই ঘটনায় বালি মাফিয়া যোগের অভিযোগ তুলেছেন।
সোমবার রাত সওয়া ৮টা নাগাদ প্রথমে খুন হন বগটুই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের (TMC) উপপ্রধান ভাদু শেখ। জাতীয় সড়কের ধারে একটি দোকানে চা পানের সময় তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। তার পর এক ঘণ্টাও কাটেনি, রাত ৯টা নাগাদ বগটুইয়ের গ্রামে পর পর কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চরমে উঠলেও, গোটা ঘটনায় পাথর এবং বালি খাদানের কোটি কোটি টাকার ব্যবসার সংযোগ উঠে আসছে। বখরা নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই প্রথমে ভাদু শেখকে খুন করা হয় এবং তার পাল্টা অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয় বলে অভিযোগ উঠছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নিহত তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ একসময় থানায় গাড়ি চালাতেন। সেখান থেকে ডাক মাস্টারের দায়িত্ব পাইয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। এর পর ২০১৩ সালে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য হন। তার পরেও যদিও ডাক মাস্টারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতের উপ প্রধান হন ভাদু শেখ।
আরও পড়ুন: Diamond Beach: সমুদ্রের পাড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ডায়মন্ড! চোখ ধাঁধানো রূপ এই সৈকতের
এর পর থেকেই রকেটের গতিতে ভাদু শেখের উত্থান শুরু হয় বলে দাবি স্থানীয়দের একাংশের। তাঁরা জানিয়েছেন, তৃণমূলে যত পদোন্নতি হতে শুরু করে, ভাদু শেখের জীবনযাত্রাও আমূল পাল্টে যেতে থাকে। গত দুই বছরে সুবিশাল বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। নিরাপত্তার জন্য সেই বাড়িতে বসানো রয়েছে আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালি-পাথরের লরি থেকে ডাক মাস্টারের নাম করে তোলাবাজি চলত। উপ প্রধান ভাদু শেখের হয়ে এই কাজ করতেন সোনা, পলাশ এবং নিউটনে শেখের মতো স্থানীয় যুবকরা। এখন তাঁরাই ভাদু শেখের খুনে অভিযুক্ত।
বীরভূমের বিভিন্ন বালি এবং পাথর খাদান থেকে লরি বিভিন্ন জায়গায় যায়। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের তরফে সেই লরি থেকে কর নেওয়া হয়। কিন্তু, অভিযোগ বিএলএলআরও দফতরের পাশাপাশি, ওভারলোডেড বালি এবং পাথরের লরি প্রতি আরও ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু, এই টাকা কারা নিচ্ছেন? কোনও উত্তর নেই ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের তরফের কর্মীদের কাছে।
স্থানীয়দের দাবি এই টাকার মোটা অংশ ভাদু শেখের ভাগে যেত। এক সময় তা মেনে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করলেও, ধীরে ধীরে তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয় সোনা, পলাশ, নিউটনদের। ভাদু শেখের দাদা বাবরের সঙ্গে বচসা তাঁদের। তার পরই গত বছরের জানুয়ারি মাসে খুন হন বাবর। এর পর, রামপুরহাটে খুন হন ভাদুর ডান হাত বাপি সাহা। দু’টি ঘটনাতেই নাম জড়ায় সোনা, পলাশ, নিউটনদের। গ্রেফতার হন সোনা এবং পলাশ শেখ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, জেলে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেও গিয়েছিলেন ভাদু। সমঝোতা করার চেষ্টা করা হলেও, তা কাজে আসেনি। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর আর গ্রামে ফেরেননি সোনা-পলাশ। এ বার ভাদুকে খুনের ঘটনার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। তার সঙ্গেই উঠে আসছে সেই অবৈধ বালি খাদানের বখরা নিয়ে গন্ডগোলের অভিযোগ। আর ভাদু শেখ খুন হওয়ার পরই, তাঁর অনুগামীরা খুনে অভিযুক্তদের বাড়ি-সহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
অথচ এই বালি খাদান নিয়ে দুর্নীতির অভিযগ উঠে আসতে থাকায়, কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার বক্তব্য ছিল, “বালি প্রাকৃতিক সম্পদ। রাজ্যের সম্পদ। যদি দেখেন কেউ আপনার এলাকায় এসব করে খাচ্ছে, সোজা অভিযোগ জানান। সেই অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তা সেই কোনও আধিকারিক হোক বা রাজনৈতিক নেতা বা কোনও কর্মচারী।”