ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, শান্তিনিকেতন: পৌষমেলার শ্রীনিকেতন মেলা বা মাঘমেলার দখল নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মেলাপ্রাঙ্গন শাসকদলের পতাকা এবং ফেস্টুনে ছেয়ে গিয়েছে। সেই দৃশ্য সামনে আসতেই সরব হল বিরোধীরা। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতীর আশ্রমিক এবহং অধ্যাপকরা। মনেলার রাজনীতিকরণ হচ্ছে, বিশ্বভারতীতে এমন রাজনীতি ঠিক নয় বলে দাবি তাঁদের। (Sriniketan Utsav)


১০২তম শ্রীনিকেতন বার্ষিক প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার কৃষিভিত্তিক মাঘমেলার সূচনা ঘটল। তিন বছর পর এই মেলা পুনরায় শুরু হল, যা বিশ্বভারতীর নিজস্ব উৎসব। সেই মেলাপ্রাঙ্গন তৃণমূলের পতাকা, ফেস্টুন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অনুব্রত মণ্ডলের ছবিতে ছেয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছেন না কেউই। (Magh Mela)


স্থানীয়দের দাবি, রূপপুর অঞ্চল তৃণমূল কমিটি ওই পতাকা, ফেস্টুন লাগিয়েছে মেলাপ্রাঙ্গনে। মেলাটি মূলত বিশ্বভারতীর হলেও, স্থানীয় মানুষজনও মেলায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তৃণমূলের তরফেও স্টল বসানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আগেও ওই মেলায় স্টল বসিয়েছে তৃণমূল। তবে এবারের স্টলটি আড়ে-বহরে অনেকটাই বড়। 


আরও পড়ুন: Chinsurah Imambara Hospital: ‘ক্ষমা চাইতে হবে বিধায়ককে, রোগী-নার্সের অনুপাত ঠিক করতে হবে’, বিক্ষোভ চুঁচুড়া হাসপাতালে


গ্রামীণ কৃষি এবং শিল্পের প্রসারে এই মাঘমেলার সূচনা করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরবর্তী কালে সুরুলের কুঠিবাড়িতে পল্লি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। রবীন্দ্রনাথের গ্রামীণ ভাবনাকে প্রসারিত করতেই এর পর শ্রীনিকেতনের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯২৩ সালে শ্রীনিকেতন বার্ষিক উৎসব শুরু হয়, যা স্থানীয়দের কাছে মাঘমেলা হিসেবে পরিচিত। 


স্থানীয় মানুষজন তো বটেই, শ্রীনিকেতন সংলগ্ন একাধিক গ্রামের কৃষকরা এই মেলায় যোগ দেন। কেউ পেল্লাই আকারের কুমড়ো মেলায় বিক্রি করেন, কেউ আবার মূলা, আদা, আখের মতো কৃষিজাত ফসলের প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। সেরা কৃষকদের সেখানে পুরস্কৃতও করা হয়। মাঝে তিন বছর মেলা বন্ধ থাকায় এবছর বেশি উৎসাহ চোখে পড়ছে মেলাকে ঘিরে। মেলা চলবে ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে। 


কিন্তু শাসকদলের পতাকা, ফেস্টুনে মেলাপ্রাঙ্গন ছেয়ে যাওয়ায়, তাল কেটেছে গোড়াতেই। অনেকে এর মধ্যে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশের গন্ধ পাচ্ছেন। স্থানীয় রূপপুর অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস কমিটি সেগুলি লাগিয়েছে বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের পর্যবেক্ষক তৃণমূলের শ্যামপ্রসাদ ওরফে বাবু দাস বলেন, "এত বড় করে মেলা হতো না আগে, এখন হচ্ছে। জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল,  দলনেত্রী মমত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকবে না!"


বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীসঙ্ঘ পরিচালনা করে।  কৃষি এবং অন্যান্য শিল্পজাত দ্রব্য প্রদর্শনীর পাশাপাশি বাউল, সুফি, কীর্তন পরিবেশিত হবে শ্রীনিকেতনের ফ্রেস্কো মঞ্চে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, "রাজনীতির রাজনীতির জায়গায় থাকা উচিত।  বর্তমানে যা পরিস্থিতি, বিশ্বভারতী পশ্চিমবঙ্গের বাইরে নয়। মুখ্যমন্ত্রী সব দিকে নজর দিতে পারেন না। তাঁর নাম দিয়ে অনেক কিছুই হয়ে যাচ্ছে। এখানকার মন্ত্রী বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী। কিন্তু এটা যাঁরা করছেন, মেলার সৌন্দর্য যাতে নষ্ট না হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দলের স্টল থাকা উচিত নয়।" বিরোধীরাও এ নিয়ে সুর চড়িয়েছেন।