গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: মলুটি গ্রাম। বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে অবস্থিত একটি গ্রাম। রামপুরহাট থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেই গ্রামেই অধিষ্ঠান করেন মা মৌলীক্ষা। এটি একটি সিদ্ধপীঠ। 


এই সিদ্ধপীঠে অন্যান্য পুজোর থেকেও শ্যামাপুজোর বিকাশ অত্যন্ত প্রকট। এখানে কালীপুজোর দিন মা মৌলীক্ষাকে কালী রূপে পুজো করা হয়। দীপাবলিতে সারাদিন ধরে চলে মায়ের পুজোঅর্চনা। দুপুরে মায়ের উদ্দেশে ভোগ নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যায় চলে আরতি। নিশি রাতে চলে মায়ের পুজো। 


সন্ধ্যাবেলায় মৌলীক্ষা মন্দিরের বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে আতসবাজি পোড়ানো হয়। এই আতসবাজি দেখতে দুই রাজ্য থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। যেসব গ্রামবাসী কর্মসূত্রে বা অন্যান্য কারণে গ্রামের বাইরে বসবাস করেন, তাঁরা সকলেই এই কালীপুজোর সময়ে গ্রামে ফেরেন। প্রথা অনুযায়ী গ্রামে কালী মায়ের পুজোর আগে ঢাক - ঢোল ইত্যাদি বাদ্য সহকারে গ্রামের স্ত্রী-পুরুষ সকলে মৌলীক্ষা মায়ের পুজো দিতে যায়। এই প্রথার নাম, 'এয়োজাত'।  


আরও পড়ুন: Kali Puja 2021: মেষ-ছাগ বলিতে দেবীকে নিবেদন, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠের ডাকাত ভবানী পাঠকের কালীপুজো এক ইতিহাসের সাক্ষী


'মৌলি' অর্থাৎ মস্তক এবং 'ইক্ষা' অর্থে দর্শন। এই দুটি শব্দের যোগে 'মৌলীক্ষা' শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবে মৌলীক্ষা মায়ের সম্পূর্ণ অবয়ব নেই। কেবলমাত্র অপরূপ লাবণ্যময়ী এক দেবীমস্তক মন্দিরের বেদিতে দেখতে পাওয়া যায়। এই দেবীর একমাত্র 'মৌলি' বা মস্তকই দেখা যায়, সেই কারণে এই দেবীর নাম 'মৌলীক্ষা'। মৌলীক্ষা মাকে সিংহবাহিনী রূপে পুজো করা হয়। 


কথিত আছে,মৌলীক্ষা মায়ের কাছে সাধক বামাক্ষ্যাপা প্রথম সিদ্ধিলাভ করেন। তাই মলুটি মৌলীক্ষা মায়ের মন্দির হল সিদ্ধপীঠ। মৌলীক্ষা মন্দিরে বামদেবের সাধনা কক্ষটি রয়েছে। সেখানে বামদেবের ব্যবহৃত ত্রিশূল ও বামদেবের বৃহৎ শঙ্খটি আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে। সাধক বামাক্ষ্যাপা তারা মাকে 'বড়মা' ও মা মৌলীক্ষাকে 'ছোটমা' বলে ডাকতেন।


মন্দিরের সেবাইত কানাই লাল চট্টোপাধ্যায় জানান, রাজা রাখালচন্দ্র রায় প্রথম স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের মন্দির প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। কালীপুজোর দিন এখানে মাকে কালী রূপে পুজো করা হয়। সেবাইত বনেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, 'সাধক বামাক্ষ্যাপা সাধনা ও সিদ্ধিলাভ করে মাকে পেয়েছিলেন। তাই এটি সিদ্ধপীঠ।' কালীপুজোর দিন সকালে মাকে ফল মিষ্টির ভোগ দেওয়া হয়। দুপুরে নয় রকম ভাজা দিয়ে খিচুড়ি ভোগ দেওয়া হয়।