গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: পৌরানিক কাহিনি অনুসারে এখানে সতীর গলার নলি বা কন্ঠনালী পতিত হয়েছিল। সতীপীঠেরই একটি পীঠ নলহাটেশ্বরী। এখানে প্রতিষ্ঠিত দেবীর নাম শেফালিকা। এখানে ভৈরব হলেন যোগীশ। কথিত আছে, মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন কামদেব। এরপর মায়ের আদেশেই তিনি ব্রাম্ভাণী নদীর তীরে ললাট পাহাড়ে নিচে দেবী নলহাটেশ্বরীর মন্দির স্থাপন করেন। মা এখানে ত্রিনয়নী। মন্দিরের ভেতরে দেবীর দেহাংশ রক্ষিত আছে। এখানে প্রত্যেক দিন দেবীকে স্নান করিয়ে মঙ্গল আরতি দেওয়ার আগে দেবীর প্রস্তরীভূত অঙ্গ ভক্তদের দর্শন করানো হয়। কালী পুজোর দিন এখানে মায়ের বিশেষ পুজো হয়। মায়ের ভোগ প্রসাদ হিসেবে খিচুরি সঙ্গে থাকে পাঁচরকমের ভাজা। আরতি হওয়া ছাড়াও নিশি রাতে মায়ের পুজো হয় নটহাটেশ্বরী মন্দিরে। 


এদিকে করোনার কোপ এবার পড়ল বালুরঘাটের ঐতিহ্যবাহী বুড়া মাকালী মন্দিরের পুজোয়। করোনা আবহের জেরে এবারে দীপান্বিতা অমাবস্যায়  শুধু শাস্ত্রীয় মতে পুজো অনুষ্ঠিত হবে বুড়াকালী মন্দিরে। পুজোর সময় মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। পুজোর ভোগ ও প্রসাদ বিতরণের অনুষ্ঠান পুরোপুরিভাবে বানচাল করা হয়েছে। সমস্ত পুজো  বাড়িতে বসেই টিভি বা ফোনে দেখতে হবে ভক্তদের। এছাড়াও পুজোর দিনগুলিতে যাতে মন্দির চত্বরে ভিড় না হয় তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বালুরঘাট বুড়া কালী পূজা সমিতির বৈঠকে এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে কমিটির সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী ও মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন।


প্রতি বছর দীপান্বিতা অমাবস্যায় ঘটা করে পুজোর আয়োজন করা হয় বালুরঘাট বুড়াকালী মন্দিরে। কথিত আছে যে, কয়েকশো বছর আগে বর্তমান বালুরঘাট বুড়াকালী মাতার মন্দিরের পাশ দিয়ে নাকি আত্রেয়ী নদী বয়ে যেত। যদিও বর্তমানে বুড়াকালী মন্দির থেকে কালের নিয়মে অনেকটা পশ্চিমে চলে গিয়েছে আত্রেয়ী নদী।


লোক মুখে শোনা যায়, মন্দির ও এখনকার বাজারের জায়গায় তখন ছিল ঘন জঙ্গল। শতাব্দী প্রাচীন এই পুজোর সঠিক বয়স কত তা কেউ বলতে পারে না। এক সময় আত্রেয়ী নদীর ধারে নিজে থেকেই নাকি ভেসে ওঠে বুড়া কালী মাতার বিগ্রহ। এক তান্ত্রিক সেই সময় ওই বিগ্রহকে তুলে নিয়ে এসে নিয়ম মেনে পুজো দেন। তার পর থেকেই এই পুজো শুরু হয় বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। প্রথম পর্যায়ে টিনের ঘেরা দিয়ে বুড়াকালী মাতার পুজো শুরু হয়। বর্তমানে বিশাল আকার মন্দিরে পুজিত হন বুড়াকালী মাতা। পুজোর দিন মায়ের প্রতিমা সোনা থেকে রূপার অলঙ্কারে সুসজ্জিত থাকে। বিগত বছরগুলোতে পুজোর দিন কয়েক হাজার ভক্তের সমাগম হত মন্দির চত্বরে।