বীরভূম: আজ শুক্লা চতুর্দশী। তারাপীঠে তারা মায়ের আবির্ভাব তিথি। গর্ভগৃহ থেকে মাকে নিয়ে আসা হয়েছে বিরাম মঞ্চে। দিনভর এখানেই পালিত হবে যাবতীয় আচার-উপচার। সকাল থেকেই মন্দিরে ভক্তদের ভিড়৷ নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ভোরে মঙ্গলারতি দিয়ে শুরু হয়েছে পূজার্চনা। 


লোকগাথা অনুযায়ী, আশ্বিনের শুক্লপক্ষের চতুর্দশীতে তারা মায়ের আবির্ভাব। কথিত আছে, পাল রাজত্বের সময় স্বপ্নে তারা মায়ের নির্দেশ পেয়ে চতুর্দশীতে শ্মশান থেকে তাঁর মূর্তি এনে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন জয়দত্ত সওদাগর। সেই উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো আজ তারাপীঠে বিশেষ পুজোর আয়োজন৷


শ্বেত শিমুল বৃক্ষের তলায় পঞ্চমুন্ডির আসনের নীচে মায়ের শিলামূর্তি আছে। শুক্লা চতুর্দশীর এই তিথিতেই সেই মূর্তি উদ্ধার করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন জয় দত্ত। এ দিন সূর্যোদয়ের আগে, ঘুম ভাঙিয়ে ভোর তিনটে নাগাদ মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে মায়ের বিগ্রহ বের করে আনা হয়। বিরাম মঞ্চে তাঁর ছোট বোন মুলুটির মা মৌলিক্ষার মন্দিরে অভিমুখে পশ্চিমদিকে বসানো হয়।


জীবিত কুণ্ডু থেকে জল এনে মাকে স্নান করানোর পর পরানো হয় রাজবেশ। এর পর বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে মঙ্গল আরতি পর্ব। আজকের দিনেই তারা মাকে এক পলক ছুঁয়ে দেখার সুযোগ পান ভক্তরা। ভক্তরা মাকে স্পর্শ করে পুজো দেন।


দিনভর বিরামমঞ্চে থাকার পর বিকেলে আরতির পর মাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মূলমন্দিরে। স্নানের পর নবরুপে সাজানো হয় দেবীমূর্তিকে। রীতি অনুযায়ী মায়ের আজ উপোস। এ দিন মায়ের মধ্যাহ্ন ভোগ হয় না। দিনভর তাই ফল-মিষ্টিই খান মা। মহাভোগ তোলা থাকে রাতের জন্য।


সকালে মঙ্গলারতির পর লুচি, মিষ্টি, সুজি দিয়ে দেওয়া হয় শীতল ভোগ। রাতে খিচুড়ি, পোলাও, পাঁচরকম ভাজা, মাছ-মাংস দিয়ে করা হয় ভোগ নিবেদন।


করোনা আবহে গত বছরের মতো এ বছরও কৌশিকী অমাবস্যায় বন্ধ রাখা হয়েছিল তারাপীঠ মন্দির। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ দিন বন্ধ তারাপীঠ মন্দির বন্ধ ছিল। গত ১৭ অগাস্ট, প্রশাসনের সঙ্গে মন্দির কমিটির বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, কোভিডের কারণে গত বছরের মতো এবছরও কৌশিকী আমাবস্যায় বন্ধ থাকবে তারাপীঠ মন্দির।


সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আগামীকাল অর্থাৎ, ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর, টানা ৬ দিন বন্ধ থাকবে তারাপীঠ মন্দির। এর মাঝে ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে কৌশিকী অমাবস্যা। 


ওই দিনে তারাপীঠে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয়। কোভিড পরিস্থিতি যাতে এত মানুষের সমাগম না হতে পারে, তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানায় মন্দির কর্তৃপক্ষ।


এই প্রেক্ষিতে ভক্তদের জন্য অনলাইনের মাধ্যেমে পুজোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ভক্তদের জন্য মন্দির কমিটি অনলাইন পূজো দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। ভিডিও কলের মাধ্যমে তারা মাকে দেখার জন্য মন্দির চত্বরে টিভি স্ক্রিন লাগানো হয়।