গোপাল চট্টোপাধ্যায়, বীরভূম: পুজোর ইতিহাস প্রায় ২৫০ বছরের বেশি পুরনো। ২৮০ বছর আগের কথা। বাংলার বেশ কিছু এলাকা বর্গী হামলায় বিপর্যস্ত। সেই সময় কাটোয়া সংলগ্ন চিটাহাটি গুড়পাড়া থেকে ভাগ্যান্বেষানে কুন্ডলা গ্রামে বাস করতে আসেন প্রভুরাম মুখোপাধ্যায়ের পুত্র হাটুরাম মুখোপাধ্যায়। সুদের বা দাদন ব্যবসা করে বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করে এই পরিবার। বিপুল বিত্তসম্পত্তির অধিকারী হয়ে নিজের প্রাসাদোপম বাড়ির পাশে বিশাল দুর্গামন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
সেই থেকে আজ অবধি মুখোপাধ্যায় পরিবার নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রত্যেক বছর পুজো চালিয়ে আসছে। পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। মন্দিরে বলিদান হয় না। সে সময় একটা বড় এলাকার মানুষ দুর্গাপুজোয় অংশ নিতেন। কাছাকাছি আর কোনও বড় পুজো হত না সেই সময়। সন্ধিপুজো শুরু হয় এখনও বন্দুক দেগে। আগে পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে বন্দুক দাগতেন। এখন দু একজন বন্দুক নিয়ে দাঁড়ান। নবমীর দিন এলাকার হাজার হাজার মানুষ খিচুড়ি ও পায়েস পংক্তিতে বলে খেতেন তৃপ্তি করে।
বছর পাঁচেক হল পরিস্থিতির চাপে তা বন্ধ রয়েছে। আগে মন্দিরে প্রবেশের মুখে বিশাল তোরণ ছিল । সেই তোরণ আর নেই। মূল মন্দিরটি মুখোপাধ্যায় পরিবারের বর্তমান বংশধরেরা উদ্যোগ নিয়ে সংস্কার করেছেন। ডাকের সাজে ঝলমল করত তখন মাতৃপ্রতিমা। এখন হয় শোলার সাজ । মায়ের মুর্তিতে স্বর্ণালঙ্কার পরানো হয়। দুর্গামন্দিরের পাশে নারায়ণ মন্দির সংলগ্ন ভোগ মন্দিরটির অবস্থা এখন জরাজীর্ণ । সেখানে আর ভোগরান্না করা যায় না। পরিবারের সদস্যরা সেটাও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
আরও পড়ুন :
জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি, নানুরের হাটসেরান্দী গ্রামের আকর্ষণ পটের দুর্গাপুজো
অন্যদিকে, কীর্ণাহারের রায় চৌধুরী পরিবারের পুজোতেও সাজো সাজে রব। এই ঐতিহ্যে কখনও ভাটা পড়েনি। শুধু এবার ভাবাচ্ছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ! ইতিমধ্যেই দেবীর আবাহন হয়েছে এই পরিবারে। শুরু হয়ে গেল কীর্ণাহারে রায় চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো। তবে এখানে কোনও মূর্তির পুজো হয় না। তবে সপ্তমীর দিন থেকে দুর্গা লক্ষ্মী ও সরস্বতীর ছবি পট চিত্রে তুলে ধরে পুজো করা হয়।
বোধনের দিন সকালে ঠাকুর বাড়ির কিছু দূরে পুকুর ঘাট থেকে শোভাযাত্রা করে ঘট জলে ভরে আনা হয়। বরণের পর শুরু হয় দুর্গা পুজো। রায় চৌধুরী বাড়ির সদস্য কাশীনাথ রায়চৌধুরী জানান, পুজোর নিয়ম এভাবেই প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। আছে সন্ধিপুজো ও অন্নভোগ দেওয়ার রীতি। তবে বোধনের দিন থেকে প্রতিদিন মোট পাঁচটি বলি হত এখানে। এই প্রথা আগে চালু থাকলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। তবে মহাষ্টমীতে বলিদান প্রথা চালু রয়েছে এখানে। মহাষ্টমীতে রায়চৌধুরী বাড়ির বলিদানের পর কীর্ণাহারে বেশকিছু পুজোর বলিদান হওয়ার প্রথা এখনও চালু রয়েছে।